ব্লগার নিলয় হত্যা: শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ

রাজধানীতে বাসায় ঢুকে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় শাহবাগে বিক্ষোভ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2015, 02:58 PM
Updated : 7 August 2015, 06:53 PM

শুক্রবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরে সামনে গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নীলের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মিছিল হয়।

শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “আগে আমাদের সহযোদ্ধাদের রাজপথে হত্যা করা হতো। আজকে আগের হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকা নিলয়কে বাসায় ঢুকে হত্যা করা হলো।

“এরপর দেখা যাবে, আজকে যারা নিলয়ের হত্যার বিচার দাবি করছি, তাদের কাউকে হত্যা করা হবে।”

শুক্রবার জুমার নামাজের সময় গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ডের কাছে একটি পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলায় ভাড়া বাড়িতে নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত নিলয় দুই বছর ধরে ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন; তিনি কাজ করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই ব্লগার ইস্টিশন ব্লগে লিখতেন নিলয় নীল নামে।

গত কিছুদিন ধরে হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলে ফেইসবুক থেকে নিজের সব ছবি সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি ঠিকানার জায়গায় বাংলাদেশের বদলে লিখেছিলেন ভারতের কলকাতার নাম। 

নিলয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ইমরান বলেন, “আমাদের সহযোদ্ধারা বিক্ষুব্ধ। আমরা একে একে চারজন সহযোদ্ধাকে হারালাম। এখনও পর‌্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।”

২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে মিরপুরে বাসার কাছে সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলাকারীদের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল গলার ওপরের অংশ, মুখ ও মাথা।

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বই মেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একই কায়দায় জঙ্গি হামলায় খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়।

৩০ এপ্রিল সকালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু।

তার এক মাসের মাথায় সিলেটে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে একই ধরনের হামলায় খুন হন আরেক মুক্তমনা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ। তিনিও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এর আগে সবগুলো ঘটনাতেই রাস্তায় হামলা হলেও ব্লগার নিলয়কে হত্যা করা হল তার বাসায় ঢুকে। তাকে যে মাঝেমধ্যেই অনুসরণ করা হচ্ছিল, তা তিনি ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন গত ১৫ মে।  

এই বিষয়ে পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাইলে গেলে পুলিশ উল্টো নিলয়কে তাড়াতাড়ি বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেয় বলে ওই পোস্টে তিনি লেখেন।

শাহবাগের বিক্ষোভের সময় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধী ও উগ্রপন্থীদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে মন্তব্য করেন ইমরান।

“তাদেরকে টাকার বিনিময়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে, এমন নজিরও আমরা কিন্তু দেখেছি। এগুলোর দায় সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর পড়ছে।

“সরকারের দায়িত্বশীল লোকেরা নানা বক্তব্য দিয়ে এ ধরনের অন্যায়কে ‘জাস্টিফাই’ করার চেষ্টা করছে।”

ইমরান জানান, যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড দ্রুত কার‌্যকরের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিটি তারা ব্লগার নিলয় হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি হিসেবে নিয়েছেন তারা।

এ সময় মঞ্চের নেতাকর্মীরা ‘ঘরে ঢুকে খুন কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই মরল কেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জবাব চাই’ ও ‘মুক্তমনায় হামলা, রুখে দাঁড়াও বাংলা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।