নিলয় হত্যার পেছনে আল কায়েদা?

ঢাকায় বাসায় ঢুকে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল ইসলামের নামে ই মেইল পাঠানো হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2015, 02:57 PM
Updated : 8 August 2015, 06:48 AM

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় লেখক অভিজিৎ রায় এবং সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার দায় স্বীকার করেও টুইট করা হয়েছিল এ সংগঠনের নামে।

শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাকার গোড়ানে নিজের বাসায় খুন হন নিলয়, যিনি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে ব্লগে লিখতেন।

জুমার নামাজের পর চার-পাঁচজন লোক বাসা দেখতে আসার কথা বলে ওই বাসায় ঢোকে এবং নিলয়কে কুপিয়ে ও জবাই করে চলে যায়।

এর চার ঘণ্টা পর ansar.al.islam.bd@gmail.com ঠিকানা থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ঠিকানায় একটি বার্তা পাঠানো হয়, যাতে প্রেরক হিসেবে রয়েছে মুফতি আব্দুল্লাহ আশরাফ নামে এক ব্যক্তির নাম। তিনি নিজেকে আনসার আল ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে দাবি করেছেন। 

ওই বার্তায় বলা হয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ!আনসার-আল-ইসলাম (আল-কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ শাখা) এর মুজাহিদিনরা হামলা চালিয়ে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসুলের দুশমন নিলয় চৌধুরী নীলকে হত্যা করেছেন।”

শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার খিঁলগাও এলাকায় ‘ওই অপারেশন সম্পন্ন হয়’ বলে ওই বার্তায় উল্লেখ করা হয়।

বার্তায় বলা হয়, “আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিকৃষ্টতম দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমরা এদের ও তাদের সাথীদের ধ্বংস করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করব ইনশা’আল্লাহ!”

নিলয় চক্রবর্তী নীল

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলছেন, নিলয়ের গলা ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপের চিহ্ন ছিল। এর আগে অন্য ব্লগারদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, নিলয়কেও খুন করা হয়েছে একই কায়দায়।

তবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একিউআইএস বা আনসার আল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আপনার কাছে শুনেছি। এ নিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলব, গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য নির্দেশ দেব।”

গত ১২ মে সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ খুন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বার্তাটি এসেছিল আনসার বাংলা ৮ নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে। সেখানেই বলা হয়, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

তার আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে লেখক অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার দুই মাসের বেশি সময় পর ৩ মে ভারতীয় উপমহাদেশের আল কায়েদার প্রধান আসিম উমর দায় স্বীকার করে একটি ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে তোলেন।

এছাড়া গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলন হত্যাকাণ্ডের পর আনসার আল ইসলামের নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে দায় স্বীকার করে বিবৃতি এসেছিল।

গত ২ জুলাই আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখার দুই শীর্ষ নেতাসহ ১২ জনকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও সরঞ্জামসহ আটক করার কথা জানানো হয় র্যা বের এক সংবাদ সম্মেলনে।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাওলানা মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিন ওরফে নানা ওরফে বদিউল (৩৫)একিউআইএস-এর বাংলাদেশ শাখার প্রধান সমন্বয়ক এবং মুফতি জাফর আমিন ওরফে সালমান (৩৪) একিউআইএসের একজন উপদেষ্টা বলে সে সময় বলা হয়।

নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করে পাঠানো বার্তার শেষ দিকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, “যদি তোমাদের ‘বাক-স্বাধীনতা’ কোনও সীমানা না মানতে প্রস্তুত থাকে, তবে তোমাদের হৃদয় যেন আমাদের ‘চাপাতির স্বাধীনতার’ জন্য উন্মুক্ত থাকে।”