ঢাকায় ভর দুপুরে বাসায় ঢুকে ব্লগার হত্যা

সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ প্রকাশ্যে রাস্তায় খুন হওয়ার পর তিন মাস না পেরোতেই ঢাকায় আরেক ব্লগারকে বাসায় ঢুকে হত্যা করা হয়েছে, যিনি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন।

গোলাম মুজতবা ধ্রুবও কামাল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2015, 08:49 AM
Updated : 7 August 2015, 07:45 PM

শুক্রবার ছুটির দিনের শান্ত দুপুরে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই পূর্ব গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ডের কাছে ৮ নম্বর রোডের ১৬৭ নম্বরের পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে খিলগাঁও থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান জানান।

নিহত নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় গত দুই বছর ধরে স্ত্রী আশা মনিকে নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। এক মাস আগেও তিনি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভ নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন।

সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ২৭ বছর বয়সী এই ব্লগার ইস্টিশন ব্লগে লিখতেন নিলয় নীল নামে। গত কিছুদিন ধরে হুমকি পাওয়ার কারণে ফেইসবুক থেকে নিজের সব ছবি সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি ঠিকানার জায়গায় বাংলাদেশের বদলে লিখেছিলেন ভারতের কলকাতার নাম।  

নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে নিলয় আড়াই মাস আগে জিডি করতে গেলেও থানা তা নেয়নি বলে ফেইসবুকে এক পোস্টেও তিনি লিখে গেছেন।   

ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “দুপুরে জুমার নামাজের পরপর দুই দফায় চারজন লোক বাসা দেখতে আসার কথা বলে ওই বাসায় ঢোকে। তারা নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের বলেন, “নিলয়ের গলা ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এর আগে অন্য ব্লগারদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এক্ষেত্রেও হত্যাকাণ্ডের ধরণ একই রকম।”

এ ঘটনাকে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে কৃষ্ণপদ বলেন, “জুমার নামাজের সময় যখন আশেপাশের বাসার পুরুষরা নামাজে গেছেন, সেই সময়টিকেই তারা বেছে নিয়েছে।”

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, ফাইল ছবি

নিলয়কে কোপানোর সময় এক হামলাকারীর পা জড়িয়ে ধরেছিলেন আশা মনি। এরপর তাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে বারান্দায় আটকে রাখা হয়।

আশার ছোট বোন ইশরাত তন্বীও ঘটনার সময় ওই বাসায় ছিলেন। চিৎকার করায় তাকেও আটকে ফেলা হয় আরেক পাশের বারান্দায়।

ঘাড় ও গলায় কুপিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে নিলয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা। ‘নারায়ে তাকবির’ বলতে বলতে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে সাংবাদিকদের জানান আশা মনি।   

এই হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগে মিছিল করে নিলয়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস এক বিবৃতিতে নিলয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে খুনীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।  এ ধরনের হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর ‘হওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

হত্যাকাণ্ডের ঘণ্টা চারেক পর আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল ইসলামের নামে সংবাদপত্র অফিসে ই মেইল পাঠিয়ে দায় স্বীকার করা হলেও পুলিশ এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। 

গত আট মাসে তিন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট হত্যার কোনো ঘটনার মীমাংসা না হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “ আমরা ইনশাল্লাহ হত্যাকারীদের ধরে ফেলব।”

নিহত নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়ের বাড়ি পিরোজপুর জেলার চাল্লিশা গ্রামে। বাবা তারাপদ চট্টোপাধ্যায় নিজের কৃষিজমি দেখাশোনা করেন। 

নিলয়ের চাচা নির্মল চট্টোপাধ্যায় জানান, তার ভাতিজা পিরোজপুরে স্কুল ও কলেজ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। দর্শন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিলয় ইন্টারনেটে লেখালেখিতে যুক্ত। 

যুব মৈত্রীর কর্মী আশা মনি বলেন, পরিবারের অমতে দুই বছর আগে নিলয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি । তখন থেকেই তারা গোড়ানের ওই বাসায় থাকছিলেন। 

তিন বছর আগে মাস্টার্স পাস করা নিলয় চলতি বছরের শুরুতে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে অধ্যাপক মেজবাহ কামালের প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভে যোগ দেন। তবে ‘নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন’ বলে মাসখানেক আগে চাকরি ছেড়ে দেন বলে মেজবাহ কামাল জানান। 

তিনি বলেন, “গত মে মাসে নিহত ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশের সঙ্গে নিলয়ের ভাল বন্ধুত্ব ছিল। ওর মধ্যে ইনসিকিউরিটি তৈরি হয়েছিল।”

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় খুন হওয়ার পর স্ত্রীর আহাজারি।

যেভাবে খুন

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আশা মনি জানান, বেলা ১টা থেকে দেড়টার মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে ২০/২৫ বছর বয়সী এক যুবক এসে জানায়, তারা কয়েকজন ওই ভবনে বাসা ভাড়া নেবেন। সেজন্য বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলতে বাসা দেখতে এসেছেন।

বাসায় ঢুকতে দেওয়ার পর প্রায় পাঁচ মিনিট বিভিন্ন ঘর ঘুরে দেখে ওই যুবক। নিলয় তখন শোবার ঘরে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন, আশা বারান্দার কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলেন এবং তার বোন তন্বী ছিলেন রান্নাঘরে।

আশা বলেন, “যুবকটি বাসায় ঢোকার পর খুব উদ্বিগ্ন ছিল। পরনে ছিল গেঞ্জি আর জিন্স প্যান্ট। পিঠে ব্যাগ ছিলো। বাসা ঘুরে দেখতে দেখতে বারবার মোবাইল ফোনে কি যেন করছিল; আর বারবার বলছিল, ‘আপনাদের বাসাটা এত ছোট কেন’?

ওই যুবক বাসার ভাড়া জানতে চাইলে আশা তাকে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর নিলয়কে বলেন, অপরিচিত ওই লোককে তিনি যেন চলে যেতে বলেন।

“নিলয় দরজার কাছে যেতেই আরও তিনজন হুড়মুড় করে বাসায় ঢোকে। একজনের মুখে বড় দাঁড়ি ছিল। ওই লোক নিলয়কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে ‘নারায়ে তকবির’ বলে চাপাতি দিয়ে কোপানো শুরু করে।”

নিলয় হাত তুলে বাধা দিতে চাইলে দুই হাতেই কোপ লাগে। আশা মনি ওই হামলাকারীর পা জড়িয়ে ধরলে চুল ধরে টেনে পিস্তল দেখিয়ে বারান্দায় নিয়ে তাকে আটকে ফেলা হয়। আরেক বারান্দায় আটকানো হয় তন্বীকে।

দুই বোন দুই বারান্দায় আটকে থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলেও আশেপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি বলে আশা মনি জানান। 

ওই বাসার তৃতীয় তলার বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিৎকার শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম ডাকাত পড়েছে। এরপর মনে হল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। পরে দুই মহিলার চিৎকারে ওই বাসায় গিয়ে দেখি লুঙ্গি পড়া এক লোক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”

হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে বেলা ২টার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। খিলগাঁওয়ের ওসি মোস্তাফিজ, মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, উপ কমিশনার মাহাবুবুর রহমান, সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী সুপার রায়হান উদ্দিন খান ছাড়াও র্যা ব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হন। 

লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুর রহমান ও জঙ্গি গ্রেপ্তারের বিভিন্ন ঘটনায় তদন্তে থাকা পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মনও আসেন।

আলামত সংগ্রহ শেষে নিলয়ের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। পুলিশের ক্রাইম সিনের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় ওই বাসায় ঢুকে নিলয়ের লণ্ডভণ্ড শোবার ঘরের মেঝেতে জমাট বাঁধা রক্ত দেখা যায়। দেয়ালেও ছিল রক্তের ছিটা।

খাটের পাশে মাঝারি আকারের একটি প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা গেলেও সেটি ছিল খালি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোনো অস্ত্রও খুনিরা সেখানে ফেলে যায়নি। তবে বাসার নিচে রক্তমাখা একটি শার্ট ও একটি গামছা পাওয়া গেছে বলে খিলগাঁওয়ের ওসি জানান।

বাসা থেকে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মর্গে।

পিছু নেওয়া শুরু আড়াই মাস আগে

আশা মনি জানান, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার প্রতিবাদে গত রোজার ১৫/২০ দিন আগে শাহবাগে একটি সমাবেশে অংশ নিয়ে ফেরার পথে নিলয়কে গুলিস্তান পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়।

বিষয়টি বুঝতে পেরে অলিগলি দিয়ে এগিয়ে খিঁলগাওয়ে না নেমে আমতলায় এসে একটি রেস্তোরাঁয় বসেছিলেন নিলয়। সেখান থেকে তিনি ফোন করলে আশা মনি সেখানে যান। পরে দুজনে বাসায় ফেরেন।

এ বিষয়টি জানিয়ে গত ১৫ মে ফেইসবুকে এক পোস্টে নিলয় লিখেছিলেন, তিনি খিঁলগাও থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, “অনেকগুলো থানা অতিক্রম করার জন্য গতকাল ঘটনাস্থলের আওতায় থাকা একটি থানায় গেলে তারা জিডি নিল না, তারা বললো আমাদের থানার অধীনে না, এটা অমুক থানার অধীনে পড়েছে ওখানে যেয়ে যোগাযোগ করুন, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যান।”

নিলয় হত্যার খবর পেয়ে তার বাসায় ছুটে আসা আরেক ব্লগার দেবজ্যোতি রূদ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিলয়কে অনুসরণ করার বিষটি জানিয়ে তিনি নিজে খিলগাঁও থানায় ফোন করেছিলেন। কিন্তু থাকা থেকে বলা হয়, ঘটনা যেহেতু শাজাহানপুর থানার আওতায়, তাদের সেখানেই যেতে হবে।

আশা মনি বলেন, “ওই ঘটনার পর নিলয় কিছু দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে আত্মগোপনে ছিল। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে খুলনায় যাবে বলেছিল। ইদানিং জার্মানিতে যাওয়ারও চেষ্টা করছিল।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, “একটি ঘটনা ঘটেছে... আমরা এখন স্পটে সেই বিষয়টি নিয়ে ব্যস্ত আছি। আগে তিনি কোথাও জিডি করতে গিয়েছিলেন কি না, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।”

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে বিক্ষোভ।

একের পর এক ব্লগার হত্যায় ক্ষোভ

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বই মেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জঙ্গি কায়দায় হামলায় খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়। এরপর ৩০ এপ্রিল সকালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু।

তার এক মাসের মাথায় সিলেটে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে একই ধরনের হামলায় খুন হন আরেক মুক্তমনা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ। তিনিও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও গলার ওপরের অংশ, মুখ ও মাথা ছিল হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু।

এর মধ্যে কেবল ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থল থেকে দুই মাদ্রাসাছাত্রকে ধরে পুলিশের দেয় জনতা। আর কোনো ঘটনাতেই হামলার স্থলে থাকা কাউকে পুলিশ কখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।   

অনন্ত বিজয় হত্যার ঘটনায় সিলেটের একটি স্থানীয় পত্রিকার এক আলোকচিত্রী এবং তার আগে অভিজিৎ হত্যার বেশ কয়েক দিন পর উগ্রপন্থি অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফারাবী শফিউর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তদন্ত বেশিদূর এগোয়নি।  

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিলয় মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। নারী ও সংখ্যালঘুর অধিকার নিয়ে, ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ব্লগে লিখতেন। 

“অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর, অনন্ত বিজয় হত্যার সুবিচারের দাবিতে আমাদের যে আন্দোলন, তাতে নিলয় ছিল আমাদের সহযোদ্ধা। আমি জানি না, এরপর কাকে প্রাণ দিতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস থাকবে, আমিও এ লড়াইয়ে থাকব।”  

নিলয় খুন হওয়ার খবর পেয়ে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, এস এম শাহীনসহ গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই নিলয়ের বাসায় ছুটে আসেন।

তাদের মধ্যে শাম্মী হক নামে একজন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনেই বলে ওঠেন, “আপনারা অভিজিতের হত্যাকারীদের ধরতে পারেননি। এটাও পারবেন না।”

খুনের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর নিলয়ের ফেইসবুক ওয়ালে অনেকেই শোক প্রকাশ করেন, প্রকাশ করেন ক্ষোভ।

সেখানে একজন লেখেন, “বিচারহীনতার এই দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে আজ পরিচয় দিতেও আজ ঘৃণা লাগছে। প্রতিনিয়ত আপন মানুষগুলোর মৃতদেহ দেখার আর শক্তি নেই। এর থেকে সরকার বলুক, আর কতগুলো লাশ দরকার তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে? নিলয় ভাই, ওয়াদা রইলো কলম থামবে না কখনো।”