হিন্দুদের ‘জমি দখলে’ মন্ত্রী-এমপিরাও

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি দখল এবং ভয়-ভীতি দেখিয়ে, নির্যাতন চালিয়ে উচ্ছেদের ঘটনায় সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2015, 04:32 PM
Updated : 6 August 2015, 04:32 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে ধরা হয়, যাতে লিখিত বক্তব্য পড়েন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে সরকার ও সব রাজনৈতিক দলের সংখ্যালঘু সেল গঠনসহ অধিকার রক্ষায় কয়েকটি দাবিও তুলে ধরা হয়।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্বৃত্তরা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, জায়গা-জমি, দেবোত্তর সম্পত্তি, গির্জা ও বিহারের সম্পত্তি জবরদখলের উন্মত্ততায় মেতে উঠেছে।

“এ জবরদখলের সঙ্গে সরকারি দলের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী পরিষদের প্রভাবশালী সদস্যের নামও বেরিয়ে আসছে।”

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি, ঠাকুরগাঁওয়ের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম, পিরোজপুরের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের নাম আসে সংবাদ সম্মেলনে। 

ইতোপূর্বে সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়িতে আগুন, তাদের স্থাপনা দখল ও অন্যান্য নির্যাতনের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির দিকে অভিযোগ তুললেও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে বৃহস্পতিবার করা সংবাদ সম্মেলন ছিল ব্যতিক্রম।

প্রায় ছয় পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যের পুরো অংশজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলের ফর্দে মূলত অভিযোগ ছিল ধর্ম নিরপেক্ষ দল হিসেবে দাবি করা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। 

এই অবস্থার অবসানে যে দাবিগুলো তুলে ধরেছে সংগঠনটি, তার মধ্যে রয়েছে- মার্কিন কংগ্রেসের আহ্বানের আলোকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, সরকারি দলসহ সব রাজনৈতিক দলে অবস্থানকারী সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী, উসকানিদাতা, লুটেরা ও জমিদখলকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সরকার ও সব রাজনৈতিক দলের সংখ্যালঘু সেল গঠন করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন পরিষদের নেতা সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, পদ্মাবতী দেবী প্রমুখ।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ঠাকুরগাঁওয়ে দবিরুল ইসলাম ও তার ছেলে মাজহারুল ইসলাম বালিয়াডাঙ্গা উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ইউনিয়নে জনৈক ব্যবসায়ীর দোকান দখলের অভিযোগ করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

মাহবুব আরা গিনির বিরুদ্ধে গাইবান্ধার রামগঞ্জ মিশন ও আশ্রমের জমি দখল ও গাছ কাটার অভিযোগ এসেছে।

ফরিদপুরের ভাজনডাঙার জমিদার সতীশ চন্দ্র গুহ মজুমদারের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের তিন একর জমি দখল করে এর ওপর স্থাপিত স্থাপনা ভাঙার অভিযোগ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের বিরুদ্ধে।

জমির বর্তমান মালিক অরুণ কুমারের কাছ থেকে বায়নানামায় জোর করে সই নেওয়ার অভিযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তবে মন্ত্রী মোশাররফের দাবি, তিনি ওই জমি কিনে নিয়েছেন।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের দাসপাড়ার ৮০টি ঋষি পরিবার ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি মতিয়ার সরদার ও তার বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। তাদের সহায়তার অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বৌদ্ধপল্লীর লোকজন চিহ্নিত জাবেদ কায়সার নোবেলের অমানসিক নির্যাতনের স্বীকার আভিযোগ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “তার বাহিনী বৌদ্ধ বসতির জায়গা জমি দখল করে নিচ্ছে।”

লক্ষ্মীপুরে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে সাবেক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ২২ জনের একটি চক্র দালালবাজারের জমিদারবাড়ির ৩৬ একর জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের।

বিভিন্ন সংগঠন ও প্রকল্পের নামে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।