ব্যাখ্যা দিতে রোববার পর্যন্ত সময় পেলেন জাফরুল্লাহ

বিচারককে ‘মানসিক অসুস্থ’ বলায় আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানাতে রোববার পর্যন্ত সময় পেয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2015, 09:01 AM
Updated : 5 August 2015, 02:14 PM

বুধবার এ বিষয়ে জবাব দেওয়ার দিন নির্ধারিত থাকলেও জাফরুল্লাহর আইনজীবীর সময়ের আবেদনে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ আগামী ৯ অগাস্ট জবাব দাখিলের নতুন তারিখ রাখেন।

জাফরুল্লাহর পক্ষে এ মামলা লড়ার কথা অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদারের। তার ‘জুনিয়র’ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বুধবার আদালতকে জানান, বাসেত মজুমদার অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। জবাব দাখিলের জন্য এক মাস সময় প্রয়োজন।

এরপর বিচারক তার কাছে জানতে চান, “আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন, নাকি মামলা লড়বেন?”

আইনজীবী সাঈদ আহমেদ এ সময় বলেন, “হয়তো ক্ষমাই চাওয়া হবে।”

এরপর বিচারক বলেন, “তাহলে সেই আবেদন দিয়ে দেন। এটাতো কঠিন কোনো বিষয় নয়।”

এরপর কিছু সময় আলোচনার পর আদালত জবাব দেওয়ার জন্য ৯ অগাস্ট পর্যন্ত সময় দেন।

ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেওয়ায় গত ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাজা দেয় আদালত। শাস্তি হিসাবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে জাফরুল্লাহ নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে সতর্ক করে দিয়ে ওই দণ্ড মওকুফ করে দেয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন আদালত সাজা ঘোষণার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে দীর্ঘসময় অনড় থাকেন। পরে রায়ের কপি হাতে দেওয়া হলে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে সাজাভোগ করেন এবং পরে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সে সময় তিনি বলেন, “আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। তিনজন বিচারপতির মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।

“যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট, কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অবস্ট্রাকশন অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুণ্ন করা।”

আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা ‘অভদ্রতা’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, “যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।”

এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর  ও নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী ও এফ এম শাহীন গত ৬ জুলাই আদালত অবমাননার এই অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের বিষয়ে গত ১২ জুলাই প্রাথমিক শুনানি করে ট্রাইব্যুনাল জাফরুল্লাহকে ২২ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে নিজের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলে। বুধবার ওই সময় ৯ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এর আগে টকশো’তে মন্তব্যের কারণে আরও একবার অবমাননার অভিযোগে জাফরুল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে জবাব দিতে হয়েছিল।