ছিটমহলে উন্নয়ন দ্রুত করার নির্দেশ

বাংলাদেশের সঙ্গে সদ্য যুক্ত হওয়া ১১১টি ছিটমহলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জানিয়ে এসব কাজ দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2015, 03:51 PM
Updated : 4 August 2015, 03:51 PM

এছাড়া বাংলাদেশের নতুন এই নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রমের অগ্রগতি মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও ওই দপ্তর থেকে জানানো হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক এবং রংপুরে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।

ওই সময় তিনি বলেন, চলতি বাজেটে সরকারের বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকার সঠিক ব্যয় নিশ্চিত এবং কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নির্দেশ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ছিটমহলবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে নিজে খোঁজ খবর রাখছেন বলে আনোয়ার জানান।

কনফারেন্স চলাকালে এ পাঁচ স্থানে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কবির বিন আনোয়ার ছিটমহলবাসীদের জন্য সকল সরকারি দপ্তরের নেওয়া উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি মনযোগ দিয়ে শোনেন। বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পরামর্শ দেন। পরে তিনি সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগিয়ে নিতে সকলের প্রতি নির্দেশ দেন।

এ কাজে কোনো অবহেলা, দুর্নীতি সহ্য করা হবে না জানিয়ে তিনি বিভাগীয় কমিশনার, সকল জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা হতে হবে। জনগণের চাহিদার কথা চিন্তা করে অগ্রাধিকারের তালিকা থাকতে হবে। এছাড়া ছিটমহলের সকল পরিসংখ্যান হতে হবে নিখুঁত ও সঠিক।

দীর্ঘদিনের বঞ্চনার শিকার এসব মানুষকে উন্নয়নের মুলধারায় সম্পৃক্ত করতে তিনি ছিটমহল গুলোকে দ্রুততম সময়ে প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় আনার তাগিদ দেন।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, কৃষি ও বিদ্যুতের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তার সকল কর্মসূচিতে ছিটমহলবাসীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আকতার হোসেন আজাদ ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

আকতার হোসেন আজাদ বলেন, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে এবং রংপুরে বিভাগীয় কমিনারের কনফারেন্স রুমে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

“চারটির মতো সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে।”

নিজস্ব নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকারের থোক বরাদ্দের বিশেষ কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি জানান।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, দেশর সবচেয়ে বড় ছিটমহল ছিল দাশিয়ারছড়া। এখানকার উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজের জন্য ৮৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বাস্তবায়ন করা হবে।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ আহসান হাবীব জানান, এ উপজেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত বিলুপ্ত ১০টি ছিটমহলের রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নে ৩৫ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করে সেভাবে কাজ চলছে।

কুড়িগ্রাম খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক শওকত আলী জানান, বিলুপ্ত ছিটমহলের জমি অত্যন্ত উর্বর। জেলার ১২টি ছিটমহলের ৯০ ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। তাই কৃষি বিভাগ থেকে সেগুলোতে কৃষি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সকল কৃষক ও কৃষাণিদের। মৌসুম ভিত্তিক শতাধি প্রদর্শণী স্থাপন করা হবে।

“দুই হাজার ৫০০ কৃষক পরিবারকে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

এছাড়া কৃষকদের মাঝে ১০৫টি পাওয়ার টিলার, ৫০টি পাওয়ার থ্রেসার, ১০০টি প্যাডেল থ্রেসার, ১০০টি স্প্রে মেশিন, একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ৫০টি শ্যালো মেশিন দ্রুত সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন জয়নাল আবেদিন জিল্লুর জানান, দাশিয়ারছড়ায় ইতিমধ্যে অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখান থেকে প্রতি শনিবার, সোমবার ও বুধবার চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আর খুব শিগগিরই কুড়িগ্রামর বিভিন্ন ছিটমহলে ৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।