পিনাকডুবির এক বছর: তদন্ত শেষ হয়নি

পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির এক বছরেও ওই ঘটনার মামলায় এখনও পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে পারেনি।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2015, 12:58 PM
Updated : 4 August 2015, 02:17 PM

এছাড়া বিশেষজ্ঞ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ীও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গত বছর ঈদুল ফিতরের পর ৪ অগাস্ট পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া যাচ্ছিল।  

মাওয়া পৌঁছার কিছু সময় আগে পদ্মা নদীতে ডুবে যায় লঞ্চটি।

সরকারি হিসাবে এখনও ৬১ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই দুর্ঘটনায় মৃত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় লঞ্চটির মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক কালু কারাগারে আটক আছেন।

তবে, তার ছেলে ওমর ফারুক লিমনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখন জামিনে আছেন।

এছাড়া মামলার আরও পাঁচ আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

ঘটনার পরদিন করা মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা লৌহজং থানার এসআই জাফর আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মামলায় এখনও চাজশিট দেওয়া যায়নি, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

“বিভিন্ন এলাকার অনেক লোক মারা গেছেন, তাই সাক্ষীও অনেক, তাদের স্বজনরা স্বাক্ষী দিতে আসতে চায় না, এসব কারণেই বিলম্ব হচ্ছে।”

তিনি জানান, কয়েক জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, বার্তা পাঠিয়েও সাক্ষীদের ডাকা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও সাক্ষী আনার চেষ্টা হয়েছে।

তবে এ পর্যন্ত কয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি।

এ ঘটনা তদন্তে পুলিশের তদন্ত চলার পাশাপাশি একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

সাত সদস্যের ওই কমিটির প্রধান ছিলেন যুগ্ম সচিব নুর-উর-রহমান। সদস্যরা হলেন বুয়েটের শিক্ষক প্রকৌশলী গৌতম কুমার সাহা, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ, বিআইডব্লিউটিসির প্রতিনিধি আব্দুল রহিম তালুকদার ও মুন্সীগঞ্জের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.নজরুল ইসলাম সরকার এবং কমিটির সদস্য সচিব সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন।

দুর্ঘটনার এক মাস সাত দিন পর উচ্চ পর্যায়ের ওই কমিটি ৬২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়।

তদন্তে তারা ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

এতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক, নকশায় ত্রুটি এবং লঞ্চটির কাগজপত্রে নানা অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কমিটির এক সদস্য তাদের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে খুশি হতেন বলে জানান।

লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় পাশের আরেকটি লঞ্চ থেকে মোবাইল ফোনে ওই দৃশ্যের ভিডিও করা হয়।

ডুবে যাওয়ার ৮ দিন পরে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।  

দুর্ঘটনার দিনে (৪ অগাস্ট) মেরিন কোর্টে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।

পরদিন ছয় জনকে আসামি করে লৌহজং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে বিআইডব্লিউটিএ।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ওই মামলার বাদী বিআইডব্লিইটএ -এর টিআই মো. জাহাঙ্গীর আলম।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, লঞ্চটি উদ্ধারে সরকারের সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল, কিন্তু সম্ভব হয়নি। নিহত ও নিখোঁজের পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে।

পরিবারগুলোর প্রতি তিনি সমবেদনা প্রকাশ করে তিনি বলেন, লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব না হলেও এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

এ মামলার পলাতক চার আসামি হলেন লঞ্চের পুরনো মালিক (কাগজেপত্রে এখনও যিনি মালিক) মনিরুজ্জামান খোকন, সারেং (মাস্টার) গোলাম নবী, সুখানী (গ্রিজার) ছবদর হোসেন মোল্লা ও কাওড়কান্দি ঘাটের ইজারাদার আব্দুল হাই শিকদার। একজনের নাম জানা যায়নি।