ভেস্তে গেল এরশাদকে পুরস্কার দেওয়ার সেই অনুষ্ঠান

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ ২৫ জনকে বিভিন্ন কারণে পুরস্কৃত করার উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে বসেছে আয়োজক কমিটির কো-চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের কারণে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2015, 08:23 AM
Updated : 4 August 2015, 04:58 PM

ভিয়েতনাম আপত্তি তোলায় জাতিসংঘ সদরদপ্তর ওই অনুষ্ঠানের জন্য জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

পরে আয়োজক সংস্থার ওয়েবসাইটে নতুন ভেন্যু হিসেবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনের রাস্তায় অবস্থিত ‘ইউনাইটেড নেশন্স চার্চ সেন্টার’ এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে ওয়েবসাইটে নতুন স্থানের কথা বলা হলেও আমন্ত্রণপত্রের সংশোধন করা হয়নি।

‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’নামে লস এঞ্জেলেসভিত্তিক এক ‘আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা’ তাদের তৃতীয় ‘গ্লোবাল অফিসিয়ালস অফ ডিগনিটি (গড)’ পুরস্কারের জন্য এবার এরশাদের নামও ঘোষণা করেছিল। ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ইউনিভার্সাল কারেজ অ্যান্ড হিরোইজম’ক্যাটাগরিতে এ সম্মাননা দিতে চেয়েছিল তারা।

‘নেপাল হিউম্যানিটেরিয়ন অ্যাম্বাসেডর’হিসেবে সাবেক বলিউড তারকা মনীষা কৈরালা, ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অন ফ্রিডম, জাস্টিস অ্যান্ড পিস’এ জাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনেথ কুন্ডা, ‘এশিয়াস ডিগনিটি ম্যান অফ দ্য ইয়ার’এ নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিল রাজ রেগমি, ‘সুপ্রিম স্পিরিচুয়াল আইকন অফ পিস’এ ভারতের যোগগুরু রবি শংকরের নামও এই তালিকায় ছিল।

অবশ্য ‘শারীরিক অসুস্থতার’ কারণে এরশাদ পুরস্কার নিতে নিউ ইয়র্কে আসছেন না বলে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সোমবারই জানিয়ে দেওয়া হয়।

আগামী ৫ থেকে ৭ অগাস্ট নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই পুরস্কার বিতরণ এবং মানবাধিকার সম্মেলনের আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছিল ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটি’। আর ওই অনুষ্ঠানের জন্য ‘যৌথ আয়োজক’হিসেবে জাতিসংঘ দপ্তরে মিলনায়তনের বুকিং দিয়েছিল ত্রিনিদাদ ও টোবাগো মিশন।

কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের একটি আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর জাতিসংঘে ভিয়েতনাম মিশন আপত্তি তোলে। তারা জাতিসংঘকে জানায়, ‘গড’ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য গঠিত কমিটির কো-চেয়ারম্যান নিগুয়েন হু চ্যানের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে হুলিয়া রয়েছে।

এরপর জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে উই কেয়ার হিউম্যানিটিকে ‘না’বলে দেওয়া হয়। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো মিশনও এ আয়োজন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

যার বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের অভিযোগ, সেই নিগুয়েন হু ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটির’র ইমিরেটাস উপদেষ্টা এবং বোর্ড সদস্য পদেও রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয় থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলা হয়, সন্ত্রাসী হিসাবে হুলিয়া জারি হয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বে কোনো অনুষ্ঠান সদর দপ্তরে করতে দেওয়া হবে না।

ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো মিশনের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভিয়েতনাম মিশন বিষয়টি জানানোর পর তারাও আর ওই এনজিওকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন না।

‘গড’পুরস্কারের জন্য এরশাদের নাম আসায় ভিয়েতনাম মিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ডুই থান নিগুয়েন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেনকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানের ২৪ ঘণ্টা আগে ওয়েবসাইটে নতুন ভেন্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

‘গড অ্যাওয়ার্ডস’র আমন্ত্রণপত্র, যাতে ভেন্যু হিসেবে জাতিসংঘ ভবনের উল্লেখ রয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, “পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষরকারী নিগুয়েন হু চ্যান ভিয়েতনামে একজন সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত। তিনি এবং তার তথাকথিত সংগঠন ‘গভার্নমেন্ট অব ফ্রি ভিয়েতনাম’ নিজ দেশে বেশ কয়েকটি বোমা হামলার পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্সসহ বিভিন্ন দেশে ভিয়েতনাম দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনায় জড়িত।”

‘গড অ্যাওয়ার্ডের’ জন্য এরশাদের মনোনীত হওয়ার বিষয়টি গত ৩০ জুলাই গণমাধ্যমকে জানান তার রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায়।

তবে ৩ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দুর এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শারীরিক অসুস্থতার’জন্য নিউ ইয়র্কে আসার পরিকল্পনা এরশাদ বাতিল করেছেন।

সামরিক শাসক থেকে রাষ্ট্রপতি, গণআন্দোলনে পতনের পরেও কারাবন্দি অবস্থায় ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ, পরবর্তীতে দেশের ক্ষমতাসীন জোটের দ্বিতীয় শীর্ষ দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত- এরশাদের এই টিকে থাকাই নজর কেড়েছিল ‘উই কেয়ার ফর হিউম্যানিটির’।

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে প্রায় এক দশক শাসনের পর ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনে পতন ঘটেছিল এরশাদের। এই সামরিক একনায়ককে হটানোর আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন অনেকে।

ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে কয়েক বছর কারাগারে ছিলেন এরশাদ। এরপর বেরিয়ে এসে নানা বিতর্ক, আলোচনা, সমালোচনার মধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে এখনও কয়েকটি মামলা বিচারাধীন।