পাথর সংকটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাথর সংকটে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2015, 03:06 PM
Updated : 3 August 2015, 03:46 PM

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থায় মধ্যপাড়া কঠিন শিলা থেকে উত্তোলিত পাথর ব্যবহার করা যায় কীনা তা বিবেচনা করা হচ্ছে, শঙ্কা দেখা দিয়েছে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফিরোজ ইকবালের সভাপতিত্বে প্রকল্পের সংকট ও ভবিষ্যত নিয়ে গত ২৭ জুলাইয়ের এক বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে। সিদ্ধান্ত এসেছে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধিরও।
 

২০০৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহা-সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সে সময় বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। আর ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।

অবশ্য পরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই সময়সীমা ২০১২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

২০১৩ সালে দ্বিতীয় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। এ সময় প্রকল্পটির ব্যয় ৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় উন্নীত করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাথর সমস্যার পাশাপাশি মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় এবার প্রকল্পটির ব্যয় নতুন করে আরো ৬০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে সওজ।

পাশাপাশি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর (লাইবিলিটিজ পিরিয়ডসহ) পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে, যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য শিগগির উপস্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে, ওই বৈঠকে প্রকল্প পরিচালক ইবনে আলম হাসান তামাবিল দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নির্মাণ কাজ বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা থেকে আহরিত পাথর ব্যবহার করা যায় কিনা তা সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান।

বিকল্প উৎস থেকে পাথর সংগ্রহ করতে হলে পাথরের দাম বেড়ে গিয়ে তা পুরো নির্মাণ সামগ্রীর নির্ধারিত দরে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইবনে আলম হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের কাছে মন্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

“সবকিছু গণমাধ্যমে বললে তা প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্তরায় হতে পারে। নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধির কারণও আমি বলতে চাই না বা বলতে বাধ্য না।”

পরে সওজের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফিরোজ ইকবালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রকল্পটি এখন পাথর সংকটে পড়েছে। ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

ভারতীয় পাথর কেন বন্ধ হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সঠিক কি কারণে পাথর আমদানি বন্ধ হয়েছে তা আমি জানি না। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশটি পাথর সরবরাহ বন্ধ করেছে বলে শুনেছি।”

মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে ফিরোজ ইকবাল বলেন, “পাথর ও রাস্তা নির্মাণ পণ্য এবং সেবার দাম বৃদ্ধির কারণেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। তবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্য়ন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও মহা-সড়কটির নির্মাণ কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হবে। বাকি এক বছর লাইবিলিটিজ পিরিয়ড হিসাবে রাখা হবে।”

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ ১০টি প্যাকেজে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাতটি প্যাকেজের কাজ পায় চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো। আর বাংলাদেশের রেজা কনস্ট্রাকশন পায় দুটি এবং তাহের ব্রার্দাস পায় একটি প্যাকেজের কাজ।

সড়ক ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভার কার্যপত্রে দেখা যায়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব পরিতোষ হাজরা সভায় সিনো হাইড্রো কোম্পানির কাজের গতি মন্থর বলে মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, ২, ৩ ও ৫  নম্বর প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়ন অত্যাধিক মন্থর হওয়ায় প্রকল্পটি পিছিয়ে পড়ছে। ওই প্যাকেজগুলোর কাজ এতটাই পিছিয়ে রয়েছে যে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন পরিতোষ।

এ বিষয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, “সিনো হাইড্রোর কাজ প্রথম দিকে একটু মন্থর হলেও শেষ দিকে তাদের কাজের গতি নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।”

সর্বশেষ ২৫ জুন প্রকল্পের হালনাগাদ অগ্রগতি অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ২৭১ কোটি টাকা।