মহাসড়কে বন্ধ ‘তিনচাকা’: চালকদের বিক্ষোভ অব্যাহত

জাতীয় মহাসড়কে ধীরগতি ও তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় অটোরিকশা-টেম্পো চালক ও মালিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2015, 02:23 PM
Updated : 3 August 2015, 02:39 PM

সোমবার নারায়ণঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলায় সরকারি এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানবন্ধনের পাশাপাশি কোথাও কোথাও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।

অটো চালকদের বিক্ষোভ-অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে এবং মুন্সীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

অটোরিকশা, টেম্পোসহ অযান্ত্রিক কম গতির সব যানবাহনকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে পহেলা অগাস্ট থেকে সারাদেশের মহাসড়কে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার।

এরপর এসব যানের চালক-মালিকরা আন্দোলন শুরু করলে তারা ‘না বুঝেই’ আন্দোলনে নেমেছেন বলে রোববার মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আড়াই লাখ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র তিন হাজার ৫৭০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর কোথাও এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবাদ-বিক্ষোভের খবর:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পথে নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা

বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অংশে অটোরিকশা চালক ও মালিকরা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে কয়েক দফা সড়ক অবরোধ করেন। এতে প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

পরে পুলিশ গিয়ে লাঠিপেটা ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মোখলেছুর রহমান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়কে চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে অটোরিকশা চালক ও মালিকরা মানববন্ধন করে।  পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করার এক পর্যায়ে মহাসড়কে শুয়ে অবরোধ তৈরি করে।

 

এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ কয়েক দফা অবরোধকারীদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। কিন্তু এরপরও তারা সরে না যাওয়ায় পুলিশ লাঠিপেটা ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একই সময় অটোরিকশা-টেম্পো চালকদের একটি দল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের মৌচাক, শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুরে অবরোধ এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের শিবু মার্কেট এলাকায় মানববন্ধন করে।

অবরোধকারীদের পুলিশ প্রতিটি জায়গা থেকেই লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়।

এছাড়া কুমিল্লার দাউদকান্দিতে আগের দিন রোববার একই দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।

দাউদকান্দি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দাউদকান্দি থানার এসআই রঞ্জন কুমার ঘোষ বাদী হয়ে রোববার রাতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশে অবরোধ-যানজট

মুন্সীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে অটোরিকশা ও টেম্পোর চালক-মালিকদের অবরোধে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

অবরোধের সময় মহাসড়কে সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া ও নিমতলী পয়েন্টে কয়েকটি বাস রাস্তার মাঝ বরাবর আটকে রেখে সামনের চাকা পাংচার করে দেয় অবরোধকারীরা। পুলিশ এসে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট মো. হাসান বলেন, “পরে বাসগুলোর চাকা পরিবর্তন করে সরিয়ে নিলে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।”

এর আগে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের মুক্তারপুরে শ্রমিকদের আরেকটি গ্রুপ রাস্তায় ব্যরিকেট দিয়ে অবরোধের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ এসে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুর অংশে মিছিল-অবরোধ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অটো চালকদের অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিলে যানজটের তৈরি হয়, যাতে সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করলে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।

কালিয়াকৈর থানার ওসি মো. ওমর ফারুক বলেন, সকাল সোয়া ৯টার দিকে মৌচাক, চন্দ্রা ও সফিপুর এলাকায় শতাধিক অটোরিকশা চালক মিছিল নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত ও যানজট সৃষ্টি হয়।

পরে সকাল সোয়া ১১টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: নরসিংদীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্বারকলিপি

জাতীয় মহাসড়কে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবিতে নরসিংদীতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক ও চালকরা শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে স্বারকলিপি দেন।

এছাড়া সকাল থেকেই নরসিংদীর শহরে চলাচল করা সব রিকশা ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার বন্ধ করে দেয় মালিক ও চালকরা।

দিনাজপুরে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ

মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি দিনাজপুর জেলা শাখার ডাকে শহরে সকাল-সন্ধ্যা অটোরিকশা চলাচল বন্ধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অটোরিকশা বন্ধ রাখার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবিতে চালকরা শহরের বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বেলা ১১টার দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ওই মিছিল নিয়ে শহর ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন তারা।

অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি দিনাজপুর শাখার সভাপতি আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দিনাজপুর মহাসড়কের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোড হয়ে কাউগা মোড় পর্যন্ত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়ার জন্য তারা স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয়েছে।

বগুড়ায় মানববন্ধন

মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের দাবিতে বগুড়ায় শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা এলাকায় মানববন্ধন করেন অটো চালক ও মালিকরা।

এর আগে মালিক-শ্রমিকরা শহরের স্টেশন রোড অবরোধ করে রাখলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

মানববন্ধনে বগুড়া অটোরিকশা পরিবহন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুর রহমান দুলু বলেন, মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করছে। এসব ফিটনেস বিহীন বাস মহাসড়ক থেকে সরাতে হবে এবং মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল করতে দিতে হবে।

দাবি মানা না হলে মানববন্ধন থেকে তারা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন।