ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি

মোহাম্মদপুরে এক বছর আগের এক ডাকাতির ঘটনায় ওই বাড়ির মালিকের ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে ‍পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2015, 04:56 PM
Updated : 2 August 2015, 04:56 PM

ওই বাড়ির লুণ্ঠিত মালামাল কেনায় দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তারের কথাও রোববার জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) সাইফুল ইসলাম।

আবাসন ব্যবসায়ী আখতার হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার তার ছোট ভাই হলেন নাজির হোসেন শামিম (৩৪)।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- নূর মোহাম্মদ (৪৮), মো. সেলিম (২৫), মো. রিয়াজ হোসেন, ফারুক হোসেন নিলয় (৩০), স্বর্ণ ব্যবসায়ী ফেরদৌস (৩২) ও সবুজ শেখ (২৩)।

সাইফুল বলেন, গত সপ্তাহে রাজধানীর সায়েদাবাদ, শ্যামলী ও মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

নুর, রিয়াজ ও সেলিম রোববার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. যায়েদ শাহরীয়ার।

গত বছরের ১১ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে আখতার হোসেনের মোহাম্মদপুর ১৩ নম্বর রোডের সাত মসজিদ হাউজিংয়ের ছয় তলা বাসার চার তলায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

আখতার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন। ডাকাতরা আখতারের বাসায় ঢুকে করে প্রথমে তার ছেলেকে চাপাতির পেছনের অংশ দিয়ে আঘাত করে। এরপর আখতারের স্ত্রী ও মেয়ের মুখ তোয়ালে দিয়ে বেঁধে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আলমারি থেকে নগদ ১৩ লাখ টাকা ও ৮৪ ভরি সোনার অলংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।

ডাকাতির দিনই আখতার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

ডাকাতির ঘটনার কিছুদিন আগে আখতারের বড় মেয়ের বিয়ে হয়।

মেয়েকে অনুষ্ঠান করে শ্বশুর বাড়ি তুলে দিতে নিজের বাড়িতে গহনা ও নগদ টাকাগুলো রেখেছিলেন বলে আখতার পুলিশকে জানিয়েছিলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান সহকারী কমিশনার যায়েদ।

তিনি বলেন, আখতারের ছোটভাই শামিম সাত বছর সৌদি আরব থাকার পর দুই বছর আগে বাংলাদেশে আসেন। তিনি দেশে এসে কোনো ধরনের কাজ করতেন না।

“অসৎ পথে অল্প সময়ে অনেক টাকা জোগাড় করতেই শামিম বড় ভাইয়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার নূর মোহাম্মদকে নিয়ে ডাকাতির পরিকলনা করেছিল,”  বলেন যায়েদ।

তিনি বলেন, নূর মোহাম্মদ ডাকাতিতে অংশ নিতে শাহাবুদ্দিন, সেলিম, রিয়াজ ও ফারুককে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে জড়িত করেছিল।

আখতারের প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহাবুদ্দিনকে বেঁধে রেখে ডাকাতি হলেও পরে তার আচরণে পুলিশের সন্দেহ হয়। তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল পুলিশ।

যায়েদ বলেন, “শাহাবুদ্দিনও ছিল ডাকাতিতে। তাকে বাসায় রেখে ডাকাতি করানোটা ছিল শামিমেরই পরিকল্পনা।”

ডাকাতি করে পাওয়া ১৩ লাখ টাকার মধ্যে শামিম ৩ লাখ, নূর মোহাম্মদ ৩ লাখ, নূর মোহাম্মদদের সহযোগী সেলিম, রিয়াজ ও ফারুক প্রত্যেকে ২ লাখ টাকা ভাগ পেয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

শামিমকে গ্রেপ্তারের খবর জানার পর আখতার প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না আপন ভাই তার বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করতে পারেন।

যায়েদ বলেন, “শামিমও গ্রেপ্তারের পর স্বীকার করতে রাজি হয়নি যে আখতার তার আপন ভাই। পরবর্তীতে গোয়েন্দারা জানতে পারেন আখতাররা ৫ ভাই। তাদের মধ্যে মেজ শামিম।”

ডাকাতির পর শামিমের সহায়তা নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান নূর মোহাম্মদ। সেখানে তার ব্যবহার করা মোবাইল ফোন নম্বর জানার পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ‘কৌশলে’ তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে।

সেলিম, রিয়াজ ও ফারুক বাংলাদেশেই কয়েকদিন পালিয়ে ছিলেন। গোয়েন্দারা তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে একই দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

ডাকাতিতে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশা প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  বলেন, “ডাকাতি করা সোনা কোথায়, কার কাছে, কত দামে বিক্রী করেছে তা জানতে তদন্ত চলছে।”

নুর ও নিলয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকার ফেরদৌস জুয়েলার্স ও শিল্পী জুয়েলার্সে তল্লাশি চালিয়ে ২.৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। এসময় গ্রেপ্তার করা হয় দোকানের মালিক ফেরদৌস ও সবুজকে।