বন্যার কবলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিকাংশ উপজেলা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2015, 04:09 PM
Updated : 2 August 2015, 04:09 PM

সাতটির মধ্যে পাঁচ উপজেলাই বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। গত সাত দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন এসব এলাকার মানুষ।

রোববার জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যা আক্রান্তদের চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালি, সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলার ফসলি জমি, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু নিয়ে অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন সাইক্লোন সেন্টারে।

চন্দনাইশ উপজেলার বরকল, বরমা, বৈলতলী, কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত। বসতবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। ভেসে গেছে পুকুর, গোয়ালসহ ঘরের অন্যান্য অংশও।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সাঙ্গু নদীর দুপাশে মাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে আনোয়ারা আট ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নই এখন পানির নিচে।

“উপজেলার ৯০ শতাংশ পুকুরের চাষের মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে।”

সরকারের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা না পেলে দূর্যোগ মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আনোয়ারার পূর্ব হাইলদরের প্রান্তিক চাষী আজিজ মিয়া। গত সাতদিন ধরে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সাইক্লোন সেন্টারে।

ত্রাণ সহায়তা পেয়ে খুশি আজিজ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পানিতে সব হারিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। ত্রাণের চালে কয়েকদিন চলতে পারব।”

বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, বৈলছড়ি ও কালিপুর ইউনিয়ন এবং পটিয়া উপজেলার বরলিয়া, ভাটিখাইন, জিরি, দক্ষিণ ভূর্ষি ও শিকলবাহা ইউনিয়ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্লাবিত সাতকানিয়া উপজেলার চরতি, খাগরিয়া, চাম্বল ও আমিলাইশ ইউনিয়ন ব্যাপক ক্ষতির শিকার।

এসব এলাকার লোকজন জানিয়েছে, বসতঘরের পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়কগুলোও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।  

পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের চাল ও নগদ অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। পানি কমে এলে আমরা জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাঘাট মেরামতের উদ্যোগ নেব।”

বন্যা পরবর্তীতে যাতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে সে জন্য সব ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন বলেও জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলাগুলোতে গত দুই দিনে দুইশ ৯৮ মেট্রিক টন চাল ও প্রায় নয় লাখ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী এনজিওগুলোকে আগামী দুই মাস ঋণের কিস্তি সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকারও আহবান জানিয়েছেন চন্দনাইশ উপজেলার বন্যা আক্রান্ত ইউনিয়ন বরকলের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলি জমি, দোকানপাট, ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

“নিম্ববিত্ত মানুষেরা যারা ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করেছে তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খাবে জানিয়ে মানবিক কারণে হলেও এনজিওগুলোকে কিস্তি আদায় থেকে আগামী দুই মাস বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।