‘দখল’ জমি ছেড়ে দেওয়ার দাবি সাংসদ দবিরুলের

হিন্দু জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠাকুরগাঁওয়ের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম বলেছেন, বিরোধপূর্ণ জমিটি এর দাবিদারকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন।

আলী আহসান হাবিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2015, 02:36 PM
Updated : 2 August 2015, 07:52 PM

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক খবর প্রকাশ করা হয়েছে দাবি করে এর পেছনে সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সাংসদ দবিরুল।

তবে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন জানিয়েছেন, দবিরুল ইসলামের এলাকার কোনো বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নই উঠে না।

গত বৃহস্পতিবার ‘সাংসদ দবিরুলের দখলে হিন্দু জমি’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে।

প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন পাড়িয়া ইউনিয়নে ‘রনবাগ ইসলামী টি এস্টেট কোম্পানি’ নামে একটি চা-বাগান গড়ে তুলেছেন ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম।

১০৬ একর (প্রায় ২৬৫ বিঘা) আয়তনের চা-বাগানের ভেতরে ও আশপাশে কয়েকটি হিন্দু পরিবারের জমি রয়েছে। এর মধ্যে অকুল চন্দ্র সিং পরিবারের ২১ বিঘা, ভাকারাম সিং ও চন্দ্র সিংয়ের ২৭ বিঘা জমি, থোনারাম সিংয়ের ২৪ বিঘা, ক্ষুদনলালের ২৪ বিঘা চা-বাগান ও আবাদি জমি রয়েছে।

তবে মূলত অকুল চন্দ্র সিংয়ের এক বিঘা জমি নিয়েই বিরোধ, যেটির অবস্থান সাংসদের জমির সঙ্গেই। বিরোধপূর্ণ ওই অংশটির তিন দিকেই ভারতের সীমান্ত। আর এক পাশে নাগর নদী।

অকুল চন্দ্রের অভিযোগ, জমি ফেরত চেয়ে সাংসদপুত্রের হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি।

সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম বলেন, “অকুল চন্দ্রের কিছু জমি নদীতে তলিয়ে গেলেও তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নদী তীরের ৩৩ শতক জমি নিজের দাবি করছেন। জোর করে জমি দখল করতে গেলে চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে তার বিবাদ হয়।”

সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম

পাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াতনেতা আইয়ুব আলী, জেলা আওয়ামী লীগের পরাজিত সভাপতি সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেন এবং তার লোকজন এই ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, বলেন সাংসদ।

গত ২৭ জুন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বলরাম গুহ ঠাকুরতা, সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইন্দ্রনাথ রায়, সদর আওয়ামী লীগ সভাপতি অরুনাংশ দত্ত টিটো সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিরোধপূর্ণ জমিসহ অকুল চন্দ্রের জমি পরিমাপ করেন।

বলরাম গুহ ঠাকুরতা সেদিন জানিয়েছিলেন, নদীতে তলিয়ে যাওয়া এবং নিচু জমিটিই অকুল চন্দ্রের।

সংসদ সদস্য দবিরুল বলেন, ”বিরোধপূর্ণ জমিটির না মালিকানা থাকলেও অকুল চন্দ্রকে সেখানে চাষাবাদ করতে বলেছি।”

তিনি বলেন, “প্রকৃত ঘটনা অনুধাবন না করেই কয়েকটি প্রভাবশালী দৈনিকও উষ্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করেছে। জমির দাবিদারদের কথায় প্রকৃত বিষয় না বুঝেই মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।”

সাংসদ দবিরুলের অভিযোগের বিষয়ে টেলিফোনে রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, “জমি নিয়ে মারামারির পর হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধি দল আমার কাছে এসেছিল।

“আমি তাদের অভিযোগ শুনে ডিসি-এসপিকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। তাদেরকে মামলাও করতে বলেছিলাম। গত জুনে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছি। এরপর আর কিছুই জানি না।”

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ বলেন, “রনবাগ এলাকায় জমি নিয়ে মারামারির ঘটনায় তদন্ত হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”

এদিকে সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে শনিবার উপজেলার চৌরাস্তায় শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষোভ সমাবেশ করে।