বরগুনা থানার ওসি রিয়াজ হোসেন জানান, শনিবার রাতে উপজেলার লেমুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা সৌদি প্রবাসী রোমান পঞ্চায়েতের স্ত্রী ও সন্তান। ঘটনার পর তিনজনকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে দুই মেয়ে মৌমি (৫) ও তায়িবার (৩) মৃত্যু হয়।
আর তাদের মা রোজী আক্তার (২৬) মারা যান রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে।
জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. কমলেশ দেবনাথ বলেন, “বাসুডিন নামের যে কীটনাশক তারা খেয়েছিলেন, এ ধরনের বিষে কাউকে বাঁচানো কঠিন।”
ওই বাসার গৃহকর্মী হারুন (৩০) জানান, শুক্রবার রোজী বিড়ালের উৎপাতের কথা বলে মারার জন্য তাকে দিয়ে বাজার থেকে বাসুডিন (কীটনাশক) কিনিয়ে আনেন। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় রোজী চানাচুর কিনতে তাকে দোকানে পাঠান।
হারুন দোকান থেকে ফিরে দেখেন, বাড়ির দোতলায় বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে, ঘরের দড়জা বন্ধ। পরে জানালা ভেঙে দোতলায় উঠে দেখা যায়, দুধের সঙ্গে বাসুডিন মিশিয়ে দুই মেয়েকে খাইয়ে রোজী নিজেও কীটনাশক পান করেছেন, অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন।
মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এ সময় উপস্থিত স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা জানান, লেমুয়া গ্রামের সুনু পঞ্চায়েতের ছেলে রোমান ও তার দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। রোমানের স্ত্রী রোজী ও তার বাচ্চারা গ্রামে থাকতেন রোমানের মায়ের সঙ্গে। গৃহকর্মী হারুনও ওই বাড়িতে থাকতেন।
রোমানের অন্য ভাইদের পরিবার সবাই আলাদা থাকেন। গত রোজার মাঝামাঝি সময়ে দেশে আসার পর বেশিরভাগ সময় রোমান জেলা শহরে নিজের আরেক বাসায় থাকছিলেন। মাসখানেকের মধ্যে তার সৌদি আরবে ফেরার কথা ছিল।
সাত-আট বছর আগে রোমানের সঙ্গে রোজীর বিয়ে হয়। এক নারীর সঙ্গে স্বামীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে রোজী এই পথ বেছে নিয়েছেন বলে প্রতিবেশীদের ধারণা। রোমান একজন মাদকসেবী বলেও তারা জানিয়েছেন।
খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে আসেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। ঘটনার তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওসি রিয়াজ হোসেন বলেন, “ওই নারী আর শিশুদের বিষ খাওয়ানো হয়েছিল কি-না, তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। তার স্বামীকে পুলিশের নজরে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হতে পারে।”