‘ফিরেছিলাম মানুষের দুঃখ ঘোচাতে’

ভাগ্যগুণে বেঁচে গেলেও স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে শত বাধা উপেক্ষা করে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2015, 03:26 PM
Updated : 1 August 2015, 03:26 PM

তিনি বলেছেন, পঁচাত্তরে পরিবারের সব সদস্যকে হারানোর পর তার ভাবনায় ছিল শুধু দেশের মানুষ।

শোকের মাস অগাস্টের প্রথমদিন শনিবার বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, একাত্তরে পরজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। আর ওই আঘাত শুধু একটি পরিবারের উপরই ছিল না, ছিল পুরো জাতির উপর।

“বাঙালি জাতির এই যে বিজয়-উত্থান, একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করা, এই পরাজয়ের প্রতিশোধটাই ছিল ওই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য। তারা চেয়েছিল বাঙালি জাতি যাতে আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।”

আর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে এই সত্যটিই প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, তাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে, যারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় এনে দিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে।

ভয়াবহ সেই দিনের কথা স্মরণ করে ধরা কণ্ঠে তিনি শোনান ছোট বোন রেহানা ও তার বেঁচে যাওয়ার সেই দিনের কথা।

ভেজা কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৩১ জুলাই জার্মানিতে গিয়ে পৌঁছাই। তখন ভাবতে পারিনি যে, এত বড় একটা আঘাত আসবে। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধান। তারপর একদিনেই সব হারালাম। সকলকে রেখে গেলাম। আর একদিনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।”

এরপর দেশে ফেরার ইচ্ছে থাকলেও তা হতে দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

“এরপর দেশে ফিরতে ফিরতে পারিনি। খুনি মোশতাক, জিয়া ক্ষমতা দখল করলো। দেশে আসতে বাধা দেওয়া হল। কিন্তু দেশের জনগণের চাওয়া ও তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই পরবর্তীতে দেশে ফিরে আসা।”

তিনি বলেন, “দুই সন্তান, তাদের স্নেহ মমতা ত্যাগ করে চলে এলাম বাংলার মানুষের পাশে; যে দুঃখি মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন। সেই দুঃখি মানুষের মুখে কীভাবে হাসি ফোটানো যায়, কীভাবে এই দেশের স্বাধীনতাকে সাফল্যমণ্ডিত করা যায়, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে লক্ষ্য নিয়েই ফিরে এসেছি বাংলার মাটিতে।”

শেখ হাসিনা দেশের ফেরার পরও বেশ কয়েকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রায় দুই ডজন মানুষ প্রাণ হারান।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “বারবার আঘাত এসেছে, মুত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু পিছপা হইনি। কারণ আমরা জানি সত্যের জয় আছেই।  

“এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন আমার বাবা, এই বাঙালি জাতিকে স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

“কোন দল, স্বাধীনতার শত্রু, চক্রান্তকারী যতই চক্রান্ত করুক না কেন; জাতির পিতাই তো বলে গেছেন বাঙালি জাতি সম্পর্কে, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। তাই এই বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এটা আমরা জানি সে জন্যই শত বাধা অত্রিকম করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।”

অনুষ্ঠানে দেশের কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনে তার সরকারের সময় বিভিন্ন উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কৃষিনির্ভর দেশ। এই কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। তিনি বারবার কৃষকদের কথা বলতেন। এই কৃষকদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা সরকার গঠনের পর সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়েছি।”

তার সরকারের সময় কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা, কুষকদের জন্য ভর্তুকি দেওয়া, কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, পল্লী সঞ্চয় বৃদ্ধি, গ্রামে অর্থ প্রবাহ বাড়ানো, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “তাদেরকে (কৃষক) উন্নত জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া ক্ষেত্রে কৃষিখাতের অবদানের কথা উল্লেখ করে কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় শেখ হাসিনা কৃষক লীগকে আরও সংগঠিত করে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান।

কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক খাদ্য মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সাংসদ ফজলে নূর তাপস প্রমুখ।