দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা থাকছে বাংলাদেশেরই

স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের পর বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহলগুলো বিনিময় হলেও দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা থাকছে আগের মতোই।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2015, 06:12 AM
Updated : 1 August 2015, 07:16 AM

১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুসারে এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

শুক্রবার রাতে দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের পর দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাও ভারতের হচ্ছে বলে কারও কারও মনে সন্দেহ দেখা দেয়।

অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, “দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ে অনেকে ভুল ধারণা সৃষ্টি করছে। এখন যে ছিটমহল বিনিময় হচ্ছে, সেটার সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই।

“সেটার সমাধান ইতোমধ্যে হয়ে আছে। সেটা তিন বিঘা করিডোরের মাধ্যমে যোগাযোগ আছে এবং ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ করা সম্ভব।”

দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতের বাংলাদেশের সীমান্তের ২০০ মিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত একটি ছিটমহল ছিল। এর তিন দিকে ভারতের কুচবিহার জেলা, একদিকে তিস্তা নদী, নদীর ওপারেও ভারতীয় ভূখণ্ড।

ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী  আড়াই বর্গমাইল আয়তনের দক্ষিণ বেরুবাড়ীর বিনিময়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলের অধিবাসীদের মূল ভূ-খণ্ডে নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও চলাচলের জন্য তিন বিঘা করিডোর চিরস্থায়ী ইজারা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত সরকার।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সদরের ১০ কিলোমিটার দূরত্বের এই তিন বিঘা করিডোর ব্যবহারের সুযোগ পেতে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীকে অপেক্ষা করতে হয় ’৯০ এর দশক পর্যন্ত।

 

প্রথমে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে এবং ২০১১ সালে ২৪ ঘণ্টার জন্য এই করিডোর খুলে দেয় ভারত। ফলে এর বাসিন্দারা বিচ্ছিন্ন এলাকায় থাকলেও তাদের বন্দি জীবন নেই, তারা যে কোনো সময় বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করতে পারেন।

অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, “অনেকে দহগ্রাম আঙ্গরপোতা নিয়ে কিছুটা সংশয় সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, এটাও এক সময় ছিটমহল ছিল। সুতরাং এটা ভারতের পাওনা।

“বাস্তবে সেটা কিন্তু সত্যি নয়। ১৯৭৪ সালের চুক্তিই এই বিতর্কের সুযোগ রাখেনি। এটা মীমাংসিত বিষয় এবং এলাকাটি বাংলাদেশের অংশ।”

ছিটের মধ্যে ছিটেরও সমাধান

কয়েকটি ছিটমহলের মধ্যে আবার যে ছিটমহলগুলো ছিল, সে নিয়েও কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক দেলোয়ার।

তিনি বলেন, “এটা খুবই নেগলিজিবল একটা বিষয়। বাংলাদেশের ছিটমহলের ভেতরে ভারতের ছিটমহল, ভারতের ছিটমহলের ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহল, এটাকে কাউন্টার এনক্লেভ (ছিটের মধ্যে ছিট) বলে। সেটি কিন্তু নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই।”

 

বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ছিটমহলের ভেতরে আবার বাংলাদেশি ছিটমহলের সন্ধান মিলছে। এ ধরনের একটি ছিটমহলের নাম চন্দ্রখানা, বাংলাদেশের মালিকানায় থাকা এই ছিটমহলটির অবস্থান দাশিয়ারছড়া নামে একটি ভারতীয় ছিটমহলের ভেতরে।

এই ছিটমহলের বাসিন্দা মো. রফিকুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সমস্যা ছিল, ভারতের ছিটমহল দিয়ে আমরা ঘেরাওতে ছিলাম। এখন চারপাশের ভারত বাংলা হয়ে গেল। আমাদের আর সমস্যা নাই।”

অধ্যাপক দেলোয়ারও বলেন, “বাংলাদেশের ছিটমহল যদি ভেতরে থাকে, সেটা বাংলাদেশেরই হয়ে যাচ্ছে। এটা আলাদা করে উল্লেখ করার বিষয় নাই।”