‘পোলারে পড়ালেহা শিখায়া বড় করতে চাই’

ছিটমহলের অধিবাসীদের কমবেশি সবাই বঞ্চনার শিকার হলেও নারীরাই বেশি পিছিয়ে। তারা নানাভাবে শোষণ-তোষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সুলাইমান নিলয় দাশিয়ারছড়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2015, 07:14 PM
Updated : 31 July 2015, 08:38 PM

শুক্রবার দাশিয়ারছড়ায় ঘুরে, অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

ভারতীয় ছিটমহলগুলো বাংলাদেশে একীভূত হওয়ার এই দিনে মৌলিক অধিকারপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি মুক্তির প্রত্যাশার কথা জানালেন কয়েকজন নারী।

ছিটের তিক্ত এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জীবন পাড়ি দিচ্ছেন দাশিয়ারছড়ার কালীরহাট এলাকার বাসিন্দা আছিয়া।

জানালেন, তার স্বামী বারেক তার কোন খোঁজ নেয় না পাঁচ বছর। এরপরও একলাই একমাত্র সন্তান আশিককে বড় করে চলছেন তিনি। পড়তে দিয়েছেন পার্শ্ববর্তী একতা স্কুলে। যেখানে আশিক দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই নারী বলেন, “স্বামীর আগের একটা স্ত্রী ছিলো। এরপরও আমাকে বিয়ে করতে আসে। আমি বিয়ে বসতে চাই নাই। এরপরও জোর করে করে। হাত-পা ধরছি। কোন কাজ হয় নাই।

“এরপর ছেলে হইলো, এখন নিজেই কোন খোঁজ খবর নেন না। ভরণ পোষণ দেয় না। কেন জোর করে বিয়া করলো, কেন আবার এরকম করলো কিছুই বুঝতে পারি নাই।”

আছিয়া বলেন, “বিচারের জন্য কত লোকের কাছে গিয়েছি। পাই নাই। এখন বাংলাদেশ হবে। বিচার সালিশও নাকি হবে। আমি আমার পোলারে পড়ালেহা শিখায়া বড় করতে চাই। আমার আর কিছু চাওয়ার নাই।”

বিধবা এক ছেলে ও তিন মেয়ের মা পঞ্চাশোর্ধ্ব সহিতোন। স্বামী সাঈদ আলীর মৃত্যুর সময় তার বড় সন্তানের বয়স ছিলো ১০ বছর।

স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিনি তার সংসার চালিয়েছেন। ক্ষুধা মেটানোর সংগ্রামে ব্যস্ত থাকায় সন্তানদের কারোরই স্কুলে পাঠানোর সুযোগ হয়নি।

সহিতোন বলেন, “বাবা কৃষাণ কাম করতো, পড়ায় নাই। ছোট বেলায় বিয়া দিয়া দিছে। তবে ওগো বাপ থাইকলে আর স্কুল থাইকলে পড়ানোর স্বাদ আছিলো। মানুষের বাড়িতে কাজ কাম কইরে খাওয়াইতাম। পড়ামু কেমনে? জীবনে কোন সরকারের কোন সহযোগিতা পাই নাই।”

পড়াশোনা করতে চাইলেও সেটা সহজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “ছিটের মানুষরে পড়বো কেমনে, বাইরের ঠিকানা লাগে, চেয়ারম্যানরে টাকা দেওন লাগে। ছিটের মাইয়াগো টাকাও (উপবৃত্তি) দেয় না। আর এই সবের ব্যবস্থা আমি মহিলা মানুষ কেমনে করমু।

“কত মানুষ চাকরি করে, আমাগো ছিটের মানুষের চাকরিতো নাই।”

নারী শ্রমিকদের শ্রমে গড়ে উঠা গার্মেন্টসেও ছিটের নারীদের কাজ মেলে না বলেও অভিযোগ করেন সহিতোন।

সহিতোন জানান, জীবনে দ্বিতীয় ঝড় আসে দুই কন্যার স্বামীর মৃত্যুতে। দুই কন্যা, সাবিনা ও জহুরা তাদের স্বামীর মৃত্যুর পর ফের তার সংসারে ফিরে এসেছে। যার মধ্যে জহুরার তিন সন্তান।

তিনি বলেন, “বাবা... শরীরের জোরও কমছে। আর কত খাটমু। সরকার যদি কোন সহযোগিতার করে তাহলে বাঁচতে পারি। কারণ এখন চলতে পারি না, খাওয়ার টাকাই নাই।”