পরিবার বলছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়। শুক্রবার ভোরে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তার বোনের স্বামী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তরা আজমপুর রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন তার শ্যালিকা।
রাতে সেখান থেকে উত্তরা ১২ নম্বর সেকশনে বাসায় ফেরার পথে দুই সহযোগীসহ আরিফ নামে তার এক সহকর্মী মেয়েটিকে রাজলক্ষ্মীর পাশে একটি নির্মাণাধীণ ভবনে নিয়ে যায় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে তার ভগ্নিপতির অভিযোগ।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্মাণাধীন ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মীসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আরিফ ও তার দুই সহযোগীকে আটক করা যায়নি। আরিফকে আটক করতে পারলে বাকি দুই যুবক কারা ছিল তা জানা যাবে।”
ওই তরুণীর ভগ্নিপতি বলেন, “নির্মাণাধীণ ভবনটির কাছ দিয়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে আরিফ ও তার সহযোগীরা জোর করে ওই ভবনের দোতলায় নিয়ে ধর্ষণ করে।”
রাত ১১টার পর বিধ্বস্ত অবস্থায় এক রিকশায় বাসায় ফেরেন সেই তরুণী। রিকশাওয়ালা পরিবারের সদস্যদের বলেন, মেয়েটি দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে মাথা ও কোমরে ব্যথা পেয়েছে।
তার ভগ্নিপতি বলেন, “ব্যথা পাওয়ার কথা শুনে আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সে আমাকে ধর্ষণের ঘটনা বললে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।”
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন বলেন, ঘটনার পর মেয়েটি ওই ভবনের দোতলার সিঁড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে এলে এক নিরাপত্তাকর্মী তাকে রিকশা ঠিক করে দেয়। পুলিশ ওই নিরাপত্তাকর্মীসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করেছে।
“ওই নিরাপত্তাকর্মী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, মেয়েটি তাকে ‘কাপড় ধরে টানাটানির’ কথা বললেও ধর্ষণের কথা বলেনি।”
বরিশালের বাবুগঞ্জে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকায় এসে বোনের বাসায় থাকছিলেন সতের বছর বয়সী ওই তরুণী। কোনো একটি কাজ করার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তার।
মাস দেড়েক আগে এক পরিচিতের মাধ্যমে তিনি ওই ডিপার্টমেন্ট স্টোরে চাকরি পান জানিয়ে ভগ্নিপতি বলেন, “ভালই চলছিল। পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল ওর। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে হেঁটেই আসা-যাওয়া করত।”
ওই তরুণীকে বর্তমানে রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)।
সেন্টারের চিকিৎসক বিলকিস বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য মেয়েটিকে নিয়ে যাবে। শনিবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে।”
চলতি বছরের ২১ মে রাজধানীর কুড়িলে কর্মজীবী এক গারো তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে দেড় ঘণ্টা ধরে চলন্ত গাড়িতে পালা করে ধর্ষণের খবর জানাজানি হলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে এক বায়িং হাউসের দুই গাড়ি চালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তার এক মাস আগে বর্ষবরণের উৎসবে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে নামে। নিপীড়কদের ধরিয়ে দিতে পুলিশ পুরস্কারের ঘোষণা দিলেও ওই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।