সরেজমিনে ওই উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত সীমান্ত লাগোয়া স্থানে ‘রনবাগ ইসলামী টি এস্টেট কোম্পানি’ নামে একটি চা-বাগান গড়ে তুলেছেন ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম।
১০৬ একর (প্রায় ২৬৫ বিঘা) আয়তনের চা-বাগানের ভেতরে ও আশপাশে কয়েকটি হিন্দু পরিবারের জমি রয়েছে। এর মধ্যে অকুল চন্দ্র সিং পরিবারের ২১ বিঘা, ভাকারাম সিং ও চন্দ্র সিংয়ের ২৭ বিঘা জমি, থোনারাম সিংয়ের ২৪ বিঘা, ক্ষুদনলালের ২৪ বিঘা চা-বাগান ও আবাদি জমি রয়েছে।
মূলত অকুল চন্দ্র সিংয়ের এক বিঘা জমি নিয়েই বিরোধ, যেটির অবস্থান সাংসদের জমির সঙ্গেই। স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছেন, অকুল চন্দ্রের এই জমিকে করিডোরের মতো করে ব্যবহার করে অন্য জমিগুলোতে যাওয়া যায়। এটি দখল হয়ে গেলে অন্য জমিগুলো দখল করা সহজ হয়।
ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নাগর নদীর তীরবর্তী বিরোধপূর্ণ ওই অংশটির তিন দিকেই ভারতের সীমান্ত। আর এক পাশে নাগর নদী এলাকাটিকে তৈরি করেছে একটি ব-দ্বীপে।
যে জমিটি নিয়ে বিরোধ সেখানে চা-বাগানের কর্মীদের একটি কুঁড়েঘরে চা এর চারা মজুদ করা হয়েছে। বাগানে ঢোকার মুখে সাংসদের বাংলো বাড়ি।
জমি ফেরত চেয়ে সাংসদের লোকজনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন অকুল চন্দ্র। সাংসদের ছেলে ও তার সহযোগীদের হামলায় আহত হয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি আবার নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।
“গত ১০ জুন আমার জমিতে চা গাছের চারা রোপণ করলে এমপি সাহেবের লোকজন বিকালে চারাগুলো নষ্ট করে দেয়। এরপর ১৭ জুন ওনার ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন আমাদের শাসিয়ে যান।”
এর দুইদিন পরই সুজনের নেতৃত্বে টি এস্টেটের লোকেরা তার ওপর হামলা চালায় বলে জানান অকুল।
“যেখানে মারধর হয়, সেখানে একটু তো ভয় থাকেই। সেদিন রাতে পরিবার নিয়ে ভারতে পালিয়েছিলাম। পরে ফিরে আসি।”
অকুল সিংয়ের ওপর হামলার সময় আহত থোনারাম সিং বলেন, “ওইদিন এমপি সাহেবের ছেলে সুজন হামলা করে। আমার ছেলেটার পা ও পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আমার দুই বিঘা জমি এখনো তার দখলে।
“জমি ফেরত চাইলে আমাদের বলে, দুই বছর তারা খাবে তারপর জমি ফেরত দেবে।”
ঘটনার পর জেলার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা এলাকাটি পরিদর্শন করলেও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে চাননি।
ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার এই বিষয়ে বলেন, “ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং একটি প্রতিনিধি দল ওই এলাকা পরিদর্শন করে।”
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “মূলত চা বাগান নিয়ে দবিরুল সাহেব এবং স্থানীয় কয়েকটি হিন্দু পরিবারের মধ্যে বিরোধের কারণে এ রকমের একটি ঘটনা ঘটেছে। কিছু সমস্যা তো আসলে ছিলই।”
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম।তার দাবি, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুনাম নষ্টের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, “আমি চার বছর ধরে ওই এলাকায় চা চাষ করছি। যে জমিটি নিয়ে বিরোধ, সেটিতে আমার একটি হাট তোলা রয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা বিশ্রাম নেয়, চা গাছ রাখা হয়।তার মানে এটি চারবছর ধরেই আমার দখলে রয়েছে।
“অকুল কিছুদিন আগে বলা নেই, কওয়া নেই সে জমিতে চা গাছ লাগিয়ে যায়। এটি নিয়ে আমার বাগানের কর্মচারীদের সঙ্গে তার কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়। ঘটনা এটুকুই। কিন্তু স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের ব্যবহার করে আমার সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে।”
হিন্ত্র সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে দবিরুল ইসলাম বলেন, “আমার ড্রাইভার, গানম্যান দুজনই হিন্দু। আমি হিন্দু বিদ্বেষী নই। আমি ৪৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি, এর আগে এরকম কোনো অভিযোগ আমার উপরে আসেনি।”