জাতীয় পতাকায় ‘আপত্তি’ কওমীর

সাধারণ ও মাদ্রাসা বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকের শুরুতে জাতীয় পতাকার ছবি ও জাতীয় সঙ্গীত থাকলেও কওমীতে নেই তা অনুসরণের বালাই, যাকে তারা বলছে ‘মুসলমানদের পাঠ্যধারা’।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 05:08 PM
Updated : 29 July 2015, 05:30 PM

কওমী মাদ্রাসার বিভিন্ন স্তরের বই ঘেঁটে এবং তুলনা করে দেখা গেছে, তাতে উঠে আসা বিষয়বস্তু মূল ধারার পাঠ্য পুস্তকের তুলনায় বেশ দুর্বল।

বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বা বেফাক বলছে, সাধারণ শিক্ষার ধারায় এখনও ব্রিটিশদের ছাপ রয়ে গেছে, অন্তত তা থেকে তারা ব্যতিক্রম।

অবশ্য এনসিটিবির বইয়ের সঙ্গে কওমী মাদ্রাসার বইগুলোর কোনো তুলনা চলে না বলে মনে করেন মাদ্রাসা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ শেখ আবু জাফর আহমেদ।

তিনি বলেন, “এনসিটিবির বইগুলোর ছবি ও ব্যাখ্যামূলক চিত্র পরিবর্তন করে যেমন- সাধারণ বইতে হাফপ্যান্ট ও টি-শার্ট পরা ছবি থাকলে তা বদলে পাজামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মাথায় টুপি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এনসিটিবির বই পড়ানো হয়।”

জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে অন্যান্য ধারার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষায় সাধারণ আবশ্যিক বিষয়সমূহে অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে।

এনসিটিবির প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বই ঘেঁটে দেখা যায়, এগুলো শুরু হয়েছে জাতীয় পতাকার ছবির সঙ্গে এর বিস্তারিত বিবরণ ও জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে, যা পাওয়া যায়নি কওমীর কোনো বইয়ে।

বরং একই স্থানে দেওয়া হয়েছে কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের মহাসচিব মুহাম্মাদ আব্দুল জব্বার জাহানবাদীর বক্তব্য।

এসব বিষয়ে মহাসচিবের বক্তব্য, “ব্রিটিশদের শিক্ষার ধারাই এখনও বহাল আছে। জেনারেল শিক্ষার চিন্তাধারার বিপরীতে আমরা না। কিন্তু জেনারেল শিক্ষায় গেলে আমরা শেষ হয়ে যাব। এখন আমরা সেই ম্যাকানিজম করছি যেন টিকে থাকতে পারি।”

কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের পাঠ্যক্রমকে সরকার ‘নেয় না’ স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা ধারা মুসলমানদের, যা শুরু হয়েছে মদিনা থেকে। আর বর্তমানে চলমান ব্রিটিশদের শিক্ষার ধারা সাংঘর্ষিক। জেনারেল শিক্ষা হল ধর্মহীন।”

সাধারণ ধারার শিক্ষায় তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকেও যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিভাগ ‘ইসলাম শিক্ষা’।

এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আরবি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ছাড়াও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়ানো হয়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জব্বার জানান, এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের ‘যোগ্য’ করে গড়তে আররির বাইরেও বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ভূগোল ও সমাজ পরিচিতি, সাধারণ জ্ঞান, বাংলা ব্যাকরণসহ ‘সাধারণ শিক্ষার’ ৬০টি বই প্রণয়ন করে তা প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে।

সাধারণ পাঠ্যধারা অনুসরণ না করলেও তাদের বইগুলো সময়োপযোগী করার চেষ্টা থেমে নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

“কিছু মাথায় নিয়ে আমরা ঘুমাইয়া পড়েছি তা নয়, সমাজের দিকেও আমাদের পুরো নজর আছে।”

মাদ্রাসাগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফজর এবং মাগরিবের নামাজের পরে মক্তবে কোরআন পড়ানো হয়। সকাল ৯টা থেকে আসর নামাজের আগ পর্যন্ত চলে সাধারণ শিক্ষা কর্যক্রম।

আব্দুল জব্বার জানান, বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ সাধারণ শিক্ষার অন্য বিষয়গুলো পড়ানোর জন্য সাধারণদেরই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাঠ্যসূচি কিছুটা কম।

কোথায় যাচ্ছে কওমী ‘ডিগ্রিধারীরা’

ব্যবসা ও শিল্প-কারিগরিকে ইসলামের অর্থনীতি অ্যাখ্যা দিয়ে জব্বার বলেন, “কওমী মাদ্রসাগুলোতেই যে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে সেই চাহিদাই পূরণ করা যাচ্ছে না, আমাদেরই বাইরের লোক লাগছে।”

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের স্থানে কওমীর বইয়ে দেখা যায় বোর্ডের মহাসচিবের বক্তব্য।

কওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করে বাংলাদেশের মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসাবে চাকরি নেন অনেকেই।

পরকালের আশায় বিভিন্নজনের অনুদানের টাকায় নতুন নতুন মসজিদ যত বাড়ছে তাদের চাহিদাও তত বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বেফাক মহাসচিব জানান, এই পাঠ্যপুস্তক পড়েই তাদের শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে চাকরি পান।

“কাতার, লন্ডন, আমেরিকা, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ডও বাংলাদেশ থেকে ইমাম নেয়। বিশ্বে ইসলামের অনুসারী বাড়ছে, ইমামের চাহিদাও বাড়ছে।”

এসব বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কওমী মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

তবে কওমী মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।