সজাগ থাকুন, শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদে না জড়ায়: রাষ্ট্রপতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 04:42 PM
Updated : 29 July 2015, 04:42 PM

বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিটি ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তনে এ আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কিছু সংখ্যক শিক্ষিত তরুণ নিজেদের অর্জিত জ্ঞানকে সামাজিক ও মানবিক কল্যাণে কাজে না লাগিয়ে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ বা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

“এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হচ্ছে।”

সমাবর্তনে ডিগ্রি পাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আজকের এই সমাবর্তন তোমাদের যেমন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তেমনি তোমাদের ওপর দায়িত্বও অর্পণ করছে। সেই দায়িত্ব পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি।”

“শিক্ষা তখনই শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, যখন তা প্রয়োগ করা হয় পরিবর্তন আনয়নে।”

দেশ ও জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

“অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত করবে না।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও শিক্ষার মান বাড়েনি মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, “গুণগত ফ্যাকাল্টির পাশাপাশি নিরন্তর গবেষণা, জ্ঞানচর্চা এবং মানবকল্যাণে তা কিভাবে প্রয়োগ করা যায় সেটি বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে উচ্চশিক্ষা সার্টিফিকেটসর্বস্ব হয়ে পড়বে।”

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সুযোগ সুবিধা বাড়লেও সে তুলনায় শিক্ষার মান কাঙিক্ষত মাত্রায় বাড়েনি উল্লেখ করে তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোরও পর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী ধরণের গবেষণা হচ্ছে, আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ কী না তা জানতে হবে।”

দেশ-বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তথ্য, গবেষণা, সেমিনার, ক্যারিকুলামসহ সমকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আবিষ্কার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশনাও দেন রাষ্ট্রপতি।

শিক্ষকদেরও নিজ নিজ ক্ষেত্রের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার আহবান জানান তিনি।

শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা না করার আহ্বান জানিয়ে আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, “যারা এ মানসিকতা নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলছেন তাদের উচিৎ হবে শিক্ষা ব্যতীত অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করা তাতে গোটা জাতি উপকৃত হবে।”

গরিব ও মেধাবীদের মেধাবিকাশে সবাইকে এগিয়ে আসারও আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।

সমাবর্তনে ১ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। তিন জন শিক্ষার্থীকে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বর্ণপদক দেন রাষ্ট্রপতি।

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অ্যামেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী।

সমাবর্তনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইউজিসি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, সিটি ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র মকবুল হোসেন, সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এন আর এম বোরহান উদ্দিন।