ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’, উপকূলে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারি হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 02:28 PM
Updated : 29 July 2015, 07:30 PM

বুধবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্রের উপপরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরার উপকূলীয় চর এলাকা পাঁচ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।

এই ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সব ধরনের জাহাজ, নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর থেকে বিকালের দিকে গভীর নিম্নচাপটি শক্তি নিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল উপকূল অতিক্রম করতে পারে।”

নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

ঝড় মোকাবেলায় রাত ৯টার দিকে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈঠকে বসে। ওই সভায়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে তৈরি রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

ঝড়ো হাওয়ায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কয়েকটি ঘর উড়ে গেছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

কক্সবাজারে বৃষ্টির মধ্যে চলছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরানোর কাজ

সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বাস্তবায়ন বোর্ডও জরুরি বৈঠকে বলে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি গবাদি পশুর নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে জনগণকে স্থানান্তর, বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণ, মেডিকেল টিম ও হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই বৈঠক থেকে।

জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সম্ভাব্য ভূমিধসের বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সিপিপির সদর দপ্তর সার্বক্ষণিক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি।

উপকূলীয় অঞ্চলের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকেও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা উপকূলবর্তী এলাকায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সন্ধ্যায়ই মাইকিং শুরু হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

বুধবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তরপূরব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

এটি বুধবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১০৫ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর পশ্চিমে, মংলা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।

নিম্নচাপ কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৪ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৬২ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।