মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে নজর দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ ও বিদেশে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 11:05 AM
Updated : 29 July 2015, 11:09 AM

বুধবার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অভ্যন্তরীণ বাজার কিন্তু সম্প্রসারিত হচ্ছে আবার বিদেশে রপ্তানির সুযোগও বাড়ছে। এখানে যে জিনিসটা দরকার; শুধু মৎস্য উৎপাদন করলেই হবে না, বাজারজাতকরণের জন্য দরকার প্রক্রিয়াজাতকরণ।”

শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশে প্রচুর সংখ্যক বাঙালি রয়েছে। দেশের মাছের প্রতি তাদেরও আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া দেশের মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণও।

“প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে যদি একটু নজর দেওয়া হয় তাহলে রপ্তানিও বাড়বে, দেশের বাজারটাও বাড়বে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ হওয়ায় এখানে রয়েছে প্রচুর খাল, বিল, হাওর, বাওর, জলাশয়।

দেশে মৎস্য চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনের পুকুরে মাছ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী।

এই সম্পদ কাজে লাগানোর জন্য ‘একটু উদ্যোগ প্রয়োজন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা কাজে লাগিয়ে আরও বেশি মৎস্য উৎপাদন করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, সরকার রপ্তানির ক্ষেত্রে মাছকে ‘আরও ব্যাপকভাবে’ নিয়ে আসতে চায়। এতে দেশের সামগ্রিক রপ্তানির হারও বাড়বে। 

তবে চিংড়ি রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা আগে যে সব অসাদুপায় অবলম্বন করেছিলেন তা বন্ধ করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে দেশের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ মৎস্য উৎপাদন, আহরণ, পক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। জিডিপিতে প্রায় চার শতাংশ অবদান রাখছে এ খাত। আর দেশের প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ ভাগ যোগান দিচ্ছে অভ্যন্তরীণ মৎস্য খাত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে মৎস্য উৎপাদন বেড়ে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে; যা আগে ছিল ২৭ লাখ মেট্রিক টন।

অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে চতুর্থ এবং অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এই খাতে গত সাড়ে ছয় বছরে মৎস্যচাষী ও মৎস্যজীবীদের আয় ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি মানুষের।

দেশে মৎস্য চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধনের পর গণভবনের পুকুরে মাছ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী।

কৃষি ও মাছ চাষ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতার দেখানো পথ ধরেই আমরা এগোচ্ছি। যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।”

তবে মৎস্য উৎপাদনের উপর আরও বেশি জোর দেওয়া, বিশেষ করে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধন রোধে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সময় জেলেদের সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৬ বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লক্ষ ২ হাজার ১০২টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৩৫ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে।

তবে এর পাশাপাশি মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময় মৎসজীবিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া জেলেদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

“আমরাই প্রথম দরিদ্র জেলেদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। মাছ ধরার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহত জেলে পরিবারের পুনর্বাসনে গত তিন বছরে ২৪৭ জেলে পরিবারকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।”

দেশে মৎস্য চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার গণভবনের পুকুরে মাছ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে ‘জাতীয় মৎস্য নীতি-১৯৯৮’প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালার আলোকে ১০৭ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় বলে জানান শেখ হাসিনা।

“আমরাই প্রথমবারের মত জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদানের কাজ শুরু করি, যা এখন সফল সমাপ্তির পথে। এ পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় ১৪ লাখ জেলেকে নিবন্ধন করা হয়েছে। অবশিষ্ট জেলেদের নিবন্ধন এই বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যায়,” বলেন তিনি।

মাছে ফরমালিন ব্যবহার বন্ধে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা মাছে ফরমালিনের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। ফরমালিনের ব্যবহার এখন আর সেভাবে দেখা যায় না।”

শেখ হাসিনা জানান, চিংড়ি এবং মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ঢাকার অদূরে সাভারে ১টি, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ২টি ‘সর্বাধুনিক’ মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাব স্থাপন এবং চাষীদের রোগমুক্ত চিংড়ি পোনা সরবরাহের জন্য কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও খুলনায় তিনটি পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কক্সবাজারে আরও ১টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশে মৎস্য চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখায় ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে পদক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বক্তব্য দেন।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৫ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের পুকুরে মাছের পোনা ছাড়েন শেখ হাসিনা।