এ রায়ের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম ‘কলঙ্কমুক্ত’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
প্রায় দুই বছর আগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সালাউদ্দিনের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে বুধবার রায় দেয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
এ মামলায় সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এত বছর পর যুদ্ধাপরাধীর বিচার চূড়ান্ত হচ্ছে এটাই বড় বিষয়।”
অচিরেই এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “এ রায়ে আমি খুশি। রায় নিয়ে যে গুজব ছিল তা দূর হয়েছে এবং আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাবেক চট্টগ্রাম প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিনকে ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই ধরে নিয়ে যান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার অনুসারীরা। নগরীর গণি বেকারির মোড়ে সালাউদ্দিনের বাসভবন ‘গুডস হিল’ এ নির্যাতন কেন্দ্রে আটকে রেখে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
সেখানে নির্যাতনের শিকার সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ম. ছলিম উল্লাহ বলেন, “একজন ঔদ্ধত্যকারীর সাজা চূড়ান্ত হল। চট্টগ্রাম কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
“আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে না গেলেও এর প্রতি আমার সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুইজন কর্মচারীকে খুঁজতে গেলে আমাকে সাকা চৌধুরীর অনুসারীরা ধরে গুডস হিলে নিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করে।”
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ৭৩ বছর বয়সী ছলিম উল্লাহ বলেন, “একাত্তরে গুডস হিলে নির্যাতন দেখে মনে হত ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিই। দীর্ঘদিন পর যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। সালাউদ্দিন কাদেরেরও বিচার হয়েছে। আমি খুশি এবং দ্রতই তা কার্যকর দেখে যেতে চাই।”
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম বলেন, “একাত্তরে সে (সাকা) আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে।
“তাকে মারার জন্য চট্টগ্রাম শহরে আমরা অপারেশন চালিয়েছিলাম। সেদিন সফল হইনি। কিন্তু আজ বিচারের রায়ে ভাল লাগছে। একটাই দাবি- ফাঁসি যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।”
সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আরেক সাক্ষী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছারও দ্রুত রায় কার্যকর দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, গণহত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
পরে সালাউদ্দিন বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন, যার আদেশ আসে বুধবার।