সাকার রায়ে ‘ন্যায়বিচার পেয়েছে’ জাতি

যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড আপিলেও বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষী, মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 06:23 AM
Updated : 29 July 2015, 06:42 AM

তারা বলছেন, প্রত্যাশিত এ রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছে জাতি।

এ রায় পুরো সমাজের জন্য স্বস্তির বলেও মন্তব্য করেছেন একজন।

বুধবার আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।একাত্তরে চট্টগ্রামে হত্যা-গণহত্যার দায়ে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আপিলেও সালাউদ্দিনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশিত ছিল জানিয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, “আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে এটি অবশ্যই অত্যন্ত প্রত্যাশিত ছিল। এরকম অপরাধে আগে যত মামলা হয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী সাকা।”

শাহরিয়ার কবির, ফাইল ছবি

একাত্তরে মুক্তিকামী বাঙালির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে মন্ত্রী বনে যাওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য নানা সময় আলোচনায় আসেন।

এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির বলেন, “একাত্তরে সহিংসতার সব সীমা সে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতেও সে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে।”

সালাউদ্দিন কাদেরের বিচার পুরো সমাজের জন্য স্বস্তির মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। অপরাধ যখনই হোক, ৪৪ বছর পার হওয়ার পরেও যে বিচার হয় তার একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

“শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশ বিচারের একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।”

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সুবিচার পেয়েছি।”

একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এ রায় প্রত্যাশিত রায়। জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে।”

সালাউদ্দিনের ফাঁসি বহালের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা সৃষ্টির পথ খুঁজতে মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত সেমিনারে রাশেদ খান মেনন।

প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এ রায়ে। ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ যুদ্ধাপরাধী রং পাল্টে বিভিন্ন সময় ক্ষমতায়ও আরোহণ করেছে। এমন এক ব্যক্তির আজ বিচার হলো। বিএনপিও অন্তত এর দায় নেবে না।”

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। দেশের মানুষের মধ্যে যে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা ছিল তা নিশ্চিত হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব এই রায় বাস্তবায়ন হোক-সেটাই আমরা চাই।”

সোমবার উপদেষ্টাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয় তুলে ধরেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/ ঢাকা, এপ্রিল ২১, ২০০৮

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বুধবার আপিলের বিভাগের রায়েও তা বহাল রাখা হয়।