বাঘ দিবস বুধবার

‘বাঘ বাঁচলে বাঁচবে বন, রক্ষা হবে সুন্দরবন’- স্লোগানকে সামনে রেখে বাঘ রক্ষায় জাতীয়ভাবে নানা কর্মসূচির মধ্যে বুধবার পালিত হবে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 06:31 PM
Updated : 29 July 2015, 04:29 AM

আবাস সংকট ও চোরা শিকারির উৎপাতে বাঘ বর্তমানে বিশ্বের মহাবিপন্ন প্রজাতি।ধীরে ধীরে কমছে বাঘের সংখ্যা। আর তাই এই দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে সেই বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশেরে সুন্দরবনে মাত্র ১০৬টি বাঘ রয়েছে বলে সম্প্রতি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, যা এক দশক আগের সংখ্যার চার ভাগের একভাগ।

খাবার সংকট রোধে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বাঘ ও হরিণসহ অন্যান্য প্রাণী হত্যা ও পাচার বন্ধে কোন বিকল্প নেই বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

বাঘ-মানুষ দ্বন্দের বিষয়ে বন অধিদপ্তরের বন সংক্ষক (বণ্যপ্রাণী অঞ্চল) তপন কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রতি বছর গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন মানুষ বাঘের আক্রমণে মারা যায়। আর গড়ে দু’তিনটি বাঘ লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে মারা পড়ে।

গত ১৫ বছরে বাঘের আক্রমণে মানুষ মারা গেছে ৩২৮ জন। এসময় মানুষের হাতে বাঘ মারা পড়েছে ৩০টি। আরও ১৩টি বাঘ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে বলে জানান এ বন কর্মকর্তা।

তবে গত তিন বছরে বাঘ-মানুষের এ দ্বন্দ্ব কমেছে বলে দাবি করছে বন অধিদপ্তর।

“বিশেষ করে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে লোকালয়ে চলে আসা কোনো বাঘ মারা যায়নি। বাঘের আক্রমণে কমেছে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও। তবে চোরা শিকারীর উৎপাত বেড়েছে,” বলেন তপন দে।

তিনি জানান, বন্যপ্রাণীর আক্রমণে ক্ষতিপূরণ নীতিমালার আলোকে এ পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং আহত ব্যক্তির পরিবারকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

মানুষের মধ্যে সচেতনতাও তৈরি হয়েছে বলেও স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।

বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সুন্দরবনে চোরা শিকারির অন্যতম টার্গেট বাঘ-হরিণ দুটোই।

“বাঘের খাবার হরিণের সংখ্যাও কমছে, আবাস ছেড়ে বাঘ লোকালয়ে আসছে। বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টিও এর একটি কারণ।”

বেসরকারি হিসাব মতে, সুন্দরবনে মায়া হরিণ দুই হাজারের বেশি, বন্য শুকর ২৮ হাজার ও অর্ধ লক্ষাধিক বানর রয়েছে।

আনোয়ারুল বলেন, “সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বাঘ কম মারা পড়ছে মানুষের হাতে। তার মানে বাঘ কম আসছে লোকালয়ে। বাঘ কমে যাওয়ার বিষয়টিও একটি কারণ হতে পারে। আবার লোকালয়ে এলেও মানুষ তাদের পাঠিয়ে দিতে পারে। কোনো কিছু নিয়ে সন্দেহ না রেখেই এখন কথাটি দাঁড়াচ্ছে-বাঘ বাঁচলেই সুন্দরবন বাঁচবে।”

১৯৭৫ সালের জরিপে (বুবার্ট হ্যান্ড্রিস) সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। ১৯৮৪ সালের জরিপে (গিটিন্স ও আকন্দ) ৪৩০টি থেকে ৪৫০টি, ১৯৯২ সালে বন বিভাগের জরিপে ৩৫৯টি, ১৯৯৩ সালের পদচিহ্ন জরিপে (তামাংগ ও দে) ৩৬২টি, ২০০৪ সালের পাগমার্ক পদ্ধতির শুমারিতে (বন বিভাগ, ইউএনডিপি ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ) ৪৪০টি (২১ বাচ্চাসহ) ও ২০০৯ সালে রেডিও টেলিমেট্রি জরিপে (বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) ৪০০টি থেকে ৪৫০টি বাঘ রয়েছে বলে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

সর্বশেষ ২০১৩-২০১৫ সালের ক্যামেরা ট্র্যাপিং মেথডে (বন বিভাগ ও ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া) সুন্দরবনে গড়ে ১০৬টি (৮৩টি থেকে ১৩০টির মধ্যে বাঘ রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বাঘ কমে যাওয়া মানেই প্রাণীটির আবাস এখন সংকটে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

গত সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ‘বিশ্ব বাঘ স্টকটেকিং সম্মেলনে’ বাঘ হত্যা ও বাঘের আবাসস্থল সঙ্কোচনের ফলে এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “আসুন সকলে মিলে আমরা বাঘ বাঁচাই, প্রকৃতি বাঁচাই।”