সাকার ফাঁসি বহাল থাকবে, প্রত্যাশা সাক্ষীদের

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের চূড়ান্ত রায়েও সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করেছেন ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া কয়েকজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 02:33 PM
Updated : 28 July 2015, 02:36 PM

আপিল বিভাগের রায়ের আগের দিন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এ প্রত্যাশার কথা জানান একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিনের হত্যা-গণহত্যা ও নির্যাতনের সাক্ষীরা। 

সালাউদ্দিন কাদেরের (সাকা) বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া ২ নম্বর সাক্ষী ম. ছলিমুল্লাহকে একাত্তরে চট্টগ্রাম নগরীর গণি বেকারির মোড়ে অবস্থিত গুডস হিলের টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল।

সত্তরোর্ধ্ব ছলিমুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একাত্তরে সাকা চৌধুরী, তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার ভাইরা মিলে চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনের উপর যে হত্যা, নির্যাতন চালিয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।”

ট্রাইব্যুনাল যথার্থ বিচার করেই ওই যুদ্ধাপরাধীর যথার্থ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে-মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে ওই শাস্তি বহাল থাকবে বলে মনে করছেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া অপর সাক্ষী বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক চট্টগ্রামের নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি এবং আমার মতো আরও অনেকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।

“যারা সাকা চৌধুরী এবং তার পরিবারের সদস্যদের হাতে নিহত বা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের স্বজনরা সকলেই প্রত্যাশা করেন আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকবে।”

ফাঁসির রায় চেয়ে শাহবাগে অবস্থান

নিজাম উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই তাকে গুডস হিলে ধরে নিয়ে যায় সাকা চৌধুরীর অনুসারীরা। সেখানে তাকে নির্যাতন করা হয় এবং পরদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

নিজাম উদ্দিনকে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়।

নিজাম উদ্দিন বলেন, “জাতি আপিলের রায়ের দিকে চেয়ে আছে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো কিছুই কাম্য নয়।”

সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া চট্টগ্রামের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছারও মনে করছেন, আপিলের রায়েও সাকার সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকবে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে হিন্দু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

পরে সালাউদ্দিনের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়, যার রায় দেওয়া হবে বুধবার।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ সকাল ৯টার পর বহু প্রতীক্ষিত এই রায় ঘোষণা করবেন।

একাত্তরে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় বলে বিচারিক আদালতের রায়ে বলা হয়।