ফরিদপুরে পাট কাটা ও বাছাই চলছে, দাম নিয়ে শঙ্কা

ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 02:19 PM
Updated : 28 July 2015, 02:19 PM

দেশে পাট উৎপাদনে এগিয়ে থাকা জেলাগুলোতে ফরিদপুর অন্যতম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক সুজন মজুমদার জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৭৪ হাজার ৯৫৬ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৭৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।

ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় নয় লাখ বেল পাট উৎপাদন হওয়ার কথা বলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

সরেজমিনে মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, সর্বত্রই চলছে পাট বাছাই। পাট জাগ দিয়ে তা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে আঁশ, আলাদা করা হচ্ছে পাটখড়ি।

এখানকার এক একটি চাষি পরিবারের প্রায় সবাইকে এ নিয়ে ব্যস্ত দেখা যায়। ছেলেমেয়ে বয়োবৃদ্ধ নির্বিশেষে পাট বাছাইয়ের কাজ করছেন।

এছাড়া জেলার গ্রামে গ্রামে শ্রাবণের কবর্ষণের ফাঁকে রোদ পেলেই অনেককে পাট শুকাতে দেখা যায়; শুকানো হচ্ছে পাটখড়িও। এলাকায় ভেসে বেড়াচ্ছে পাটের গন্ধ।

মধুখালীর উজানদিয়া গ্রামের উত্তর পাশের বিলে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ অসংখ্য কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ রকম পাট কাটা, বাছাই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত।

এ গ্রামের হাবিব, জব্বার, নাছেরসহ চাষিরা বললেন, পাটের মৌসুমে এখানকার রাস্তাঘাটে চলাচলও মুশকিল হয়ে যায়। পাট ও পাটখড়ি শুকানোর কাজে পাকা রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হলেও ভালো মানের বীজের অভার ও আবহাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না পাওয়ার আক্ষেপ দেখা যায় চাষিদের কণ্ঠে।

এছাড়া পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দাম নিয়ে শঙ্কা তো রয়েছেই।

চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে ভালো আবহাওয়া পেলেও পরবর্তীতে পাট বেড়ে ওঠার জন্য ভালো আবহাওয়া ছিল না।

ক্ষেত থেকে পাট কাটার কাজ চলছে

বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দেওয়ার পর চলছে পাট ছাড়ানোর কাজ

এদিকে চলতি সপ্তাহে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাটে মান ভেদে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হতে দেখা যায়। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে চাষিরা বাজারের চেয়ে মণ প্রতি ৩০-৬০ টাকা বেশি দর পাচ্ছেন।

কামারখালি হাটে রবিন নামে একজন ফড়িয়া বলেন, প্রকার ভেদে তারাও এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত মন দরে পাট কিনছেন।

বর্তমান এই বাজার দর পাট চাষে ‘উৎসাহিত হওয়ার মত নয়’ বলে মন্তব্য করে সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের কৃষক এমএম জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভালো মানের প্রতি মণ পাট উৎপাদনে তাদের প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকার মতো খরচ পড়ে যায়।

এক সময়ে পাট উৎপাদন ও রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। তবে কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারের পর পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমাসহ নানা কারণে পাটের ওই সুসময় আর নেই।

এদিকে পাট চাষে আগ্রহী করতে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক সুজন মজুমদার।

তিনি বলেন, “জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। তবে কৃষক ঠিকমতো পাটের মূল্য পেলে চাষিরা লাভবান হবে; এতে পাট চাষে তারা বেশি আগ্রহী হবেন।”