মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির আওতায় এক মতবিনিময় সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী চুমকি ‘বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরই থাকছে’- তা লেখার পরামর্শ দেন।
প্রস্তাবিত আইনে নারীর বিয়ের বয়স ১৮ বছর রাখার পাশাপাশি অন্য কোন শর্ত থাকছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আপনাদেরকে বলছি, আপনারা শুধু বিয়ের বয়স ১৮ বছরই থাকছে এটুকুই লিখবেন, এর বেশি কিছু লিখতে যাবেন না।”
‘বাল্যবিয়ে নির্মূলে করণীয়’ বিষয়ে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
জনগণের মধ্যে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স নির্ধারণ নিয়ে গণমাধ্যমের কারণে নানা ধরণের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে- ইঙ্গিত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিয়ের বয়স কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। আইনটি পাস হলে আপনারা তা বুঝতে পারবেন।”
এর আগে সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের বয়স কমানোর বিষয়ে মন্ত্রিসভার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, “বিয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে নামানো কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এর সঙ্গে জড়িত সমস্ত শর্ত অবশ্যই বাদ দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “যদি কোনো শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের বয়স কমানোর সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে দীর্ঘ বছর ধরে আমাদের জাতীয় অনেক অর্জন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।”
সভায় ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক শিপা হাফিজা দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ব্র্যাক আয়োজিত ১৯টি কর্মশালায় প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীও জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার পদ্ধতি নির্ভুল এবং শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন।
বিয়ের বয়স কমানোর পরিকল্পনাকে অসাংবিধানিক অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “বিয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে করা হলে সেটা সংবিধানবিরোধী হবে। সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু। আর শিশু বিবাহ কোনভাবেই কাম্য নয়।”
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. মুসার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক সাহায্যবিষয়ক দপ্তর-ডিএফআইডির বাংলাদেশ প্রতিনিধি সারা কুক, পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মিলি বিশ্বাস, প্ল্যান বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ অব প্ল্যানিং তানিয়া জামান প্রমুখ।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাল্য বিয়ের শিকার ও নিজেদের বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছেন এমন নারী, বিয়ে নিবন্ধনকারী (কাজী, ইমাম, পুরোহিত), ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষক, অভিভাবক সভায় তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
ব্র্যাকের এই কর্মসূচি থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার ৬৫ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সবোর্চ্চ এবং পৃথিবীতে চতুর্থ। দেশে প্রতি তিনটি বিয়ের দুটিতেই কনের বয়স থাকে ১৮ বছরের নিচে।
এছাড়া দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবারে বাল্যবিয়ে হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।