অন্যদিকে নিয়োগ, পদায়নসহ বেশকিছু বিষয় থেকে সরে থাকতে মন্ত্রী নির্দেশনা দিলেও উপাচার্যের দাবি, মন্ত্রী সবাইকে সঙ্গে নিয়েই তাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলনে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারসমর্থক ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’।
অচলাবস্থা কাটাতে গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরদিন বিকালে তিনি কথা বলেন উপাচার্যের সঙ্গে।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী কিছু সিদ্ধান্ত নেন, যাতে কার্যত উপাচার্যের ক্ষমতা খর্ব হয়। নিয়োগ, নতুন ব্যবস্থা চালু বা কাউকে নতুন কোনো পদে দায়িত্ব দিতে উপাচার্যকে নিষেধ করা হয়।
পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষকদের আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ‘শোভন’ করতে বলা হয়। তাদের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজে অংশ নিতে পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী।
বৈঠকের এসব সিদ্ধান্ত ওইদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞতিতে জানানো হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম সেদিন বলেন, “মার্যদাপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্য শুধু দৈনন্দিন কাজ, বেতনভাতা, ছুটি প্রদান ও আন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ করতে পারবেন।
“নতুন কাউকে নিয়োগ বা নতুন পদে কাউকে দায়িত্ব দিতে পারবেন না। একই সঙ্গে তিনি একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভাও করতে পারবেন না।”
তবে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কোনো নির্দেশনা পাননি বলে উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়ার দাবি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী আমাকে কোনো নির্দেশনা দেননি। প্রশাসনিক পদ থেকে যে ৩৭ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন, তার জায়গায় আমি সাতজনকে নিয়োগ দিয়েছি। মন্ত্রী আমাকে শুধু বাকি শিক্ষকদের পরিবর্তে দায়িত্বে কাউকে না দিতে বলেছেন।”
নতুন পদে কাউকে নিয়োগ দিতে বা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা ও সিন্ডিকেট সভা করতে কোনো বাধা নেই বলেও উপাচার্য দাবি করেন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে আগের মত ব্যানার টানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন না করলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা রয়েছে শিক্ষকদের।
সোমবার রাতে এক সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ সামসুল ইসলাম বলেন, “উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বুধবার দুপুরে আমরা র্যালি ও সমাবেশ করব। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিলেও তারা শুধু ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক সামসুল আলম বলেন, “আমরা তো আগেই ঘোষণা দিয়েছি এ উপাচার্যের সঙ্গে কোনো কাজ করব না। উপাচার্য পদত্যাগ করুক, এর পরদিন থেকেই সবাই প্রশাসনিক কাজে অংশ নেবেন।”
তবে শিক্ষকদের এ আন্দোলন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে ‘নত না হওয়ার’ ঘোষণা রয়েছে উপাচার্যের। তিনি বলেন, “আমি তো চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে।”
মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো হয়নি, তবে তাদের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছে রয়েছে।”