মানব পাচার: ‘ব্যর্থতায়’ আটকে আছে বাংলাদেশ

মানব পাচার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে টানা চতুর্থ বছরের মত দ্বিতীয় স্তরেই (টায়ার-২) রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে, যার কারণ হিসেবে ‘ন্যূনতম মানদণ্ড’ রক্ষায় সরকারের ‘ব্যর্থতার’ কথা বলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 07:33 AM
Updated : 28 July 2015, 07:33 AM

অবশ্য মানব পাচার ঠেকাতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হয়েছে এ পতিবেদনে। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সোমবার ওয়াশিংটনে ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন (টিআইপি)’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। বাংলাদেশসহ মোট ১৮৮টি দেশের মানব পাচার পরিস্থিতি এতে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে কেরি বলেন, “মোদ্দা কথা হল, আত্মতুষ্টিতে ভোগার সময় এখন নয়।”

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর ভয়ঙ্কর চেষ্টা এবং থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচারকারীদের পরিত্যক্ত ক্যাম্পে অভিবাসন প্রত্যাশীদের গণকবর নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আলোচনার মধ্যেই এ প্রতিবেদন এল।

বিশ্ববাজারে মানব পাচারের বিষয়টিকে এবারের প্রতিবেদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে একজন শ্রমিক কী কী বিপদের মুখে পড়তে পারেন, এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সরকার ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কী পদক্ষেপ নেওয়া উটিৎ- সে বিষয়েও প্রতিবেদনে সুপারিশ রাখা হয়েছে।

মানব পাচার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কূটনৈতিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয় পররাষ্ট্র দপ্তরের এই প্রতিবেদনকে।    

মানব পাচার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তিনটি স্তর বা টায়ারে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে যেসব দেশ পাচার ঠেকাতে ‘কার্যকর’ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেসব দেশকে প্রথম স্তর বা টায়ার-১-এ রাখা হয়।

দ্বিতীয় স্তর বা টায়ার-২ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল টায়ার-২ এবং টায়ার-২ ওয়াচলিস্ট। সবশেষে রয়েছে তৃতীয় স্তর বা টায়ার-৩।

তিন বছর টায়ার-২ ওয়াচলিস্টে থাকার পর  ২০১২ সালে বাংলাদেশ টায়ার-২-তে উঠে আসে। এ বছরও বাংলাদেশের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের চোখে বদলায়নি।

বাংলাদেশ আগের অবস্থানে থাকলেও মালয়েশিয়া এবার  একধাপ এগিয়ে টায়ার-২ ওয়াচলিস্টে এসেছে। আর থাইল্যান্ড গতবারের মতোই তৃতীয় স্তরে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানব পাচারের উৎসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, বাংলাদেশি নারী, পুরুষ ও শিশুদের অন্য দেশে পাচার করে শ্রম দিতে বা যৌনকর্মী হিসেবে কাজে বাধ্য করা হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হয় মানব পাচারের ‘ট্রানজিট’ হিসাবে।     

“সরকার ২০১২ সালের মানব পাচার আইন বাস্তবায়নের জন্য নীতি তেরিতে কাজ করলেও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি,” বলা হয় প্রতিবেদনে।   

পাচারের শিকার মানুষদের রক্ষায় সরকারের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা আছে বলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়। 

এতে বলা হয়, ঋণের দায় মেটাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইট ভাটায় বহু পরিবার দাসের জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। ঋণের টাকা ‘উদ্ধারে’ ভাটা মালিকরা কখনো আবার নারীদের যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দিচ্ছে। একইরকম ঘটনা রয়েছে টিংড়ি ঘের ও চা বাগানেও।    

কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাসরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের হিসেবে, ২০১৪ সালে পাচারের শিকার হওয়া ২ হাজার ৬২১ জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করেছে। আগের বছর উদ্ধার হয়েছিলেন ১০৯০ জন।  

সরকারের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা থাকায় গতবছর উদ্ধার হওয়া আড়াই হাজার মানুষের মধ্যে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান পেয়েছেন মাত্র নয়জন।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে মানব পাচার আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষণ, পাচারের শিকার মানুষের সুরক্ষার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে।