গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত ও গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে।
এরই মধ্যে ওই হত্যাচেষ্টা মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের দুই জন হত্যা মামলায় সাজা ভোগ করে কয়েক মাস আগে বেরিয়ে এসেছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজধানীর উত্তরা, কুড়িল ও ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, যাদের মধ্যে পাঁচ জন ওই হত্যাচেষ্টায় জড়িত ছিল বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।”
জবানবন্দি দেওয়া পাঁচ জন হলেন, বিপ্লব, সালাউদ্দিন, টিটো, মিজান ও রহিম।
তাদের মধ্যে রহিম ১৭ বছর ও বিপ্লব ১০ বছর সাজা ভোগ করে কয়েক মাস আগে বেরিয়ে আসে। অপর দুই জন হলেন জুলহাস ও আকবর, অবশ্য তারা জামিনে রয়েছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. স্নিগ্ধ আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রেপ্তার পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যার পর বনানীর কাস্টমস স্টাফ হাউসে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে ঢুকে তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তাদের গুলিতেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন গুরুতর আহত হন।”
উপকমিশনার মাহবুবুর রহমান জানান, রাজস্ব বোর্ডের ওই কর্মকর্তাকে হত্যা চেষ্টার কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট করে কিছু জানতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে নয়, বরং হত্যা চেষ্টার কারণ অন্যকিছুই।
তবে তদন্তের স্বার্থে এরচেয়ে বেশি কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান এই কর্মকর্তা।
“পেশাদার খুনি খুঁজতেও তিন মাসের বেশি সময় নিয়েছিল পরিকল্পনাকারীরা। তারা নজরদারিতে রেখেছিল জাহাঙ্গীরের বাড়ি, কর্মস্থল। এমনকি রাজস্ব কর্মকর্তা যেখানে শরীরচর্চা করতেন গ্রেপ্তারদের নজরদারি সেখানেও ছিল।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হত্যার পরিকল্পনাকারীরা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে চেয়েছিল। খুনের ঘটনায় যুক্তদের জানানো হয়েছিল, জাহাঙ্গীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
“সেখানকার নারী কর্মীদের সঙ্গে প্রায়ই জাহাঙ্গীর অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলেও তাদের বলা হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য দিয়ে হামলায় অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছিল।”
গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে এই তদন্ত কর্মকর্তা জানান, খুন করতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে তারা।
তবে রাজস্ব বোর্ডের ওই কর্মকর্তাকে হত্যা করতে আরো বেশি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার তদন্তে অনেক হেবিওয়েট ব্যক্তির নামও বেরিয়ে আসতে পারে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম এখনো শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
গ্রেপ্তারদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওই মামলার বাদী ও জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মশিউর রহমান জানান, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তারদের নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।