সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা ছাত্রনেতাদের সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “১৯৪৮ সাল থেকেই ছাত্রলীগ পথ দেখাচ্ছে। এদেশের ছাত্রদের প্রতি যে মানুষের একটা আস্থা, বিশ্বাস ছিল সেটা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।”
তবে কেউ অন্যায় করলে তার প্রশয় দেওয়া যাবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
একদিন আগে রোববার দেশের প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ২৮তম সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করেন।
৬৭ বছরের পুরনো সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য জাতির পিতা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিটি অর্জনের পেছনে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে।”
এ সময় স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
নির্ধারিত বয়স ও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করাকে ছাত্রলীগের দৃষ্টান্ত স্থাপন উল্লেখ করে এজন্য নিজেকে গর্বিত ভাবছেন ষাটের দশকের ছাত্রনেতা শেখ হাসিনা।
নবনির্বাচিত নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “নেতাকর্মীরা যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে তার মর্যাদা দিয়ে চলতে হবে। তোমাদের মাঝ থেকেই উঠে আসবে আগামী দিনে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তারা।”
“ভোগ নয়, ত্যাগের মধ্যে দিয়েই কিন্তু নিজেকে তৈরি করতে হবে। তাহলে একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।”
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ একে এক ধ্বংস করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যারা স্বাধীনতা চায়নি, গণহত্যা করেছে, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল তাদের হাতের ক্ষমতা তুলে দেওয়া বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ তার আদর্শ নিয়ে চলে। একটা লক্ষ্য স্থির রেখেই তারা রাজনীতি করেন।
“কাজেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অল্প বয়স থেকেই সেভাবে তৈরি করতে হবে নিজেকে। আমি কি পেলাম, না পেলাম সেটা বড় কথা না। আমি দেশকে কি দিতে পারলাম, মানুষকে কি দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা।”
বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তিসহ নানা খাতে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। যদি আমরা ভোগের রাজনীতি করতাম তাহলে এটা করতে পারতাম না। কারণ রাজনীতিটা আমাদের কাছে দেশ সেবা করার সুযোগ।”
বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “তিনি সবসময় এদেশের মানুষকে ভালবেসেছেন এবং অতিরিক্ত ভালবেসেছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের তিনি একমাত্র নেতা যিনি সংগঠন করবার জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন।”
ছাত্রলীগ নেতাদের সংগঠন শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সংগঠন ছাড়া আসলে কোন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না। সংগঠন যত শক্তিশালী হবে ততই কিন্তু আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশের উন্নতি করা সম্ভব হবে।
“আদর্শ নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। আদর্শহীন সংগঠন হল কাণ্ডারিহীন নৌকার মতো। কোথায় ভেসে যাবে কেউ জানে না।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শ নিয়েই সবাইকে তৈরি হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
“আমি ছাত্রলীগের প্রতিটা নেতাকর্মীকে বলবো, পরবর্তী প্রজন্ম যেন ভুল না করে সেজন্য এই (মুক্তিযুদ্ধের) আদর্শকে ধরে, চেতনাকে ধরে রাখা। আর আমরা বিজয়ী জাতি এই কথাটা মনে রেখে মাথা উঁচু করে চলা।”
প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পড়াশোনা ও তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করেন নিজেদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলারও পরামর্শ দেন।
পাশাপাশি পরাজিত শক্তির ‘দোসররা’ যেন আর এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করারও আহ্বান জানান।
ছাত্রলীগ নিয়ে ‘অনেক অপপ্রচার’ হয় মন্তব্য করে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে জয় বলেন, “আমার বিশ্বাস যে আপনারা আমাদের স্বাধীনতা চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে নিয়ে দেশের জন্য কাজ করবেন।”
ছাত্রলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিদায়ী সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, নতুন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, এস এম জাকির হোসাইন।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, ইসহাক আলী খান পান্না, মাহবুবুল হক শাকিল, সাইফুজ্জামান শিখর, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন জেলা ও নগর কমিটির নেতারাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে নব নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগরের নতুন দুটি কমিটি দলীয় সভানেত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
ছাত্রলীগের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে সংগঠনটির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন।