হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেছেন, ঈদুল ফিতরের দিন কারাগারে গউছের উপর হামলাকারী ইলিয়াছ মিয়া ছোটন জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কাছে এই ‘ষড়যন্ত্র’ ফাঁস করেছেন।
“তদন্ত কমিটিতে ইলিয়াছ দাবি করেছে, অর্থমন্ত্রী মুহিত ও হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরকে হত্যার জন্য গউছ তাকে ভাড়া করেছিলেন। কারাগারে বসেই তাদের চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী টাকা ও তার জামিনের ব্যবস্থা না করায় গউছের উপর হামলা চালায় সে।”
দুটি হত্যামামলার আসামি ইলিয়াছ সোমবার হবিগঞ্জের বিচারিক হাকিম কৌশিক আহম্মদ খোন্দকারের আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেও একই স্বীকারোক্তি দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হবিগঞ্জ পৌরসভার বরখাস্ত মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গউছের উপর ঈদের দিন সকালে চড়াও হন বন্দি ইলিয়াছ, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির নজির বলে বিএনপি দাবি করে আসছে।
গউছের উপর হামলা এবং পরবর্তীতে কারাগারে ভাংচুরসহ বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত করতে জেলা প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিতে রোববার সাক্ষ্য দেন ইলিয়াছ।
অর্থমন্ত্রী মুহিত হবিগঞ্জের পাশের জেলা সিলেটের সংসদ সদস্য। হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন, যার হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিএনপি নেতা গউছ কারাগারে রয়েছেন।
তদন্ত কমিটিকে দেওয়া ইলিয়াছের বক্তব্য উদ্ধৃত করে পুলিশ কর্মকর্তা নাজিম বলেন, “ওই চুক্তি অনুযায়ী অর্থমন্ত্রীকে হত্যার জন্য ১০ কোটি টাকা এবং হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরকে হত্যার জন্য ইলিয়াছকে গউছের ২ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
“চুক্তির শর্ত ছিল, ইলিয়াছকে ঈদের আগে জামিনে মুক্ত করা এবং অগ্রিম হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেওয়া। কিন্তু গউছ এর কিছুই করেননি। তখন বিষয়টি ফাঁস করলে তাকে হত্যা করা হতে পারে- এমন ভয় থেকে গউছের উপর হামলা চালায় বলে ইলিয়াছ দাবি করেছে।”
ইলিয়াছকে উদ্ধৃত করে পুলিশের বক্তব্যের বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সফিউল আলম কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
“যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে, তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত প্রকাশ করা সম্ভব নয়,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন তিনি।
জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম গত ১৮ জুলাই ৫ সদস্যের এ কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে সময় আরও তিন দিন বাড়ানো হয়।
ইলিয়াছকে সোমবার হবিগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে দুপুরে ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত হাকিমের কাছে তিনি জবানবন্দি দেন বলে জানান ওসি নাজিম।
পরে তাকে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়।
গত ১৮ জুলাই হামলার পরপরই গউছকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই হামলার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি ১৯ জুলাই হবিগঞ্জে আধাবেলা হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।