সাংবাদিক, লেখক, নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন শুক্রবার সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
বেশ কিছুদিন ক্যান্সারে ভুগে গত বছর ২৫ জুলাই ৬৬ বছর বয়সে মারা যান বেবী মওদুদ। তিনি ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর।
“অত্যন্ত সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন বেবী মওদুদ, কখনো তাতে পরিবর্তন হয়নি। ক্ষমতা বলয়ের কাছাকাছি থাকার পরেও কোনো ধরনের সুবিধা নেওয়া বা প্রভাব খাটানোর ঘটনা ঘটেনি। অনেকে নানা ধরনের অনুরোধ করেছেন, অনেকে অসন্তুষ্ট হয়েছেন; কিন্তু তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি।”
নবম জাতীয় সংসদে বেবী মওদুদ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট বান্ধবী ছিলেন বেবী মওদুদ। তাদের দুজনের বন্ধুত্বের বিষয়গুলোও উঠে আসে আলোচনায়।
আনিসুজ্জামান বলেন, “বেবীর মতো মানুষ বিরল। তার সততা, নিষ্ঠা, মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ সবার জন্যে অনুকরণীয়। প্রেসক্লাব যেন ছিল তার দ্বিতীয় বাসগৃহ, সবখানেই স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে প্রেসক্লাবের নাম লিখতেন।”
প্রেসক্লাবে এই সাংবাদিকের স্মৃতি স্থায়ী করতে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতায় যুক্ত বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, বিবিসি, দৈনিক ইত্তেফাক, বাসস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় দীর্ঘদিন কাজ করেন। পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।
এক সময়ের এই সহকর্মীর কথা স্মরণ করে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, মানুষকে কীভাবে ভালোবাসতে হয়- জীবনাচরণ দিয়ে তা বুঝিয়ে গেছেন বেবী মওদুদ।
“এ যুগে সবাই স্বার্থান্ধ। কিন্তু বেবী মওদুদ ছিলেন একেবারেই নির্মোহ। তার আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।”
সাংবাদিকদের কল্যাণে বেবী মওদুদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন সমকাল সম্পাদক।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মেহনতি-ক্ষেতমজুর মানুষের প্রতি বেবী মওদুদের ছিল ‘অগাধ’ ভালোবাসা। রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হলেও তার সেই ভালোবাসা ‘কখনো কমেনি’।
“ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও কোনো সুযোগ না নেওয়ার উদাহরণ দিতে পারবে না আর কেউ। এ জীবনাচরণ সবার অনুসরণ করা উচিত,” বলেন সেলিম।
নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সোচ্চার।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এই স্মরণসভায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ফোনালাপের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
“আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি- সাংবাদিক সমাজ আয়োজিত বেবী মওদুদ আপার স্মরণসভায় যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আমারও খুব খারাপ লাগছে।”
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট বন্ধু হয়েও বেবী মওদুদের রিকশায় চলাফেরা এবং সাদাসিধে জীবনযাপনের কথা স্মরণ করে শাকিল বলেন, “এখানেই তার বিশেষত্ব। বিশেষ করে ক্ষমতার প্রখর সূর্যের পাশে থেকেও কীভাবে সাধারণ থাকা যায় তার দৃষ্টান্ত বেবী মওদুদ।”
লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার যে ভালোবাসা, গভীর মমত্ব.. তা যেন রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি।”
১৯৪৮ সালের ২৩ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন বেবী মওদুদ। তার বাবা আবদুল মওদুদ ছিলেন একজন বিচারপতি। আর মায়ের নাম হেদায়েতুন নেসা। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বেবী ছিলেন তৃতীয়।
ছোট ভাই আবু রায়হান ও বড় ছেলে রবিউল হাসান অভীও স্মরণসভায় বেবী মওদুদের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।
সাংবাদিকতার জন্য তার নামে একটি পুরস্কারের ব্যবস্থা করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়া বৃত্তিতে টাকার পরিমাণ বাড়ানো হবে বলে জানান অভী।
মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার আছরের পর ধানমণ্ডির বাসায় দোয়া মাহফিলে সবাইকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেন তিনি।
সাংবাদিক ফরিদ হোসেনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংসদ কাজী রোজী, সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ, প্রকাশক ওসমান গণি আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বেবী মওদুদের ছোট ছেলে শফিউল হাসান দীপ্তসহ সাংবাদিক নেতারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।