দরিয়ানগর কবিতামেলা ও শান্তিযাত্রার অবিস্মরণীয় আয়োজন

বাংলাদেশের কবিতার অঙ্গনে ‘কবিতাবাংলা’ নামটি খুব পুরোনো নয়, কিন্তু ইতোমধ্যেই নিজেদের কর্মচাঞ্চল্যে হয়ে উঠেছে দেশের আলোচিত কবিতার সংগঠন।

. ফরিদ আহমদ দুলালবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2013, 12:08 PM
Updated : 14 Jan 2013, 12:16 PM

বিশ্বব্যাপী শুদ্ধ কবিতা চর্চার আহবান জানিয়ে কবিতাবাংলা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে ২০০৮ সালে। ‘কবিতাবাংলা’ নামের কবিতা বিষয়ক কাগজ প্রকাশের মাধ্যমেই কবিতাবাংলার প্রথম পথচলা। ২০০৯ ‘মানবিক সৌন্দর্যের জন্য কবিতা’ শ্লোগানকে উপজীব্য করে আয়োজন করা হয় ‘দরিয়ানগর কবিতামেলা ১৪১৬’ অনুষ্ঠানের। দরিয়ানগর-খ্যাত কক্সবাজারে আয়োজিত দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় শান্তিশপথ, শোভাযাত্রা, কবিতাপাঠ, সেমিনার ও পুরস্কারপ্রদান ছাড়াও ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পিঠা উৎসব। প্রথম কবিতামেলায় দেশের প্রায় দুইশতাধিক কবি-সাহিত্যিক অংশ গ্রহণ করেন। সে বছর সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে ‘কবিশ্রেষ্ঠ’ অভিধায় ভূষিত করে কবিতাবাংলা। মেলারকবি সম্মাননা পান কবি অসীম সাহা। অন্যান্যের মধ্যে কবিতায় কবি আসাদ মান্নান, ছড়ায় আসলাম সানী, নাসের মাহমুদ ও আলম তালুকদারকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। সাহিত্য সংগঠন হিসেবে জাতীয় কবিতা পরিষদ, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ, ম্যাজিক লণ্ঠন ও কবিতাবাংলা-কুমিল্লা শাখাকে কবিতাবাংলা পদক প্রদান করা হয়। সাহিত্যপত্র সম্মাননা লাভ করে ‘একবিংশ’। কবিতাবাংলা কক্সবাজার-এর ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত দু’দিনের অনুষ্ঠান মুগ্ধ করে কাব্যপিপাসুদের। ২০১০-এর ৪, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর কবিতাবাংলা আয়োজন করে তিনদিনব্যাপী ‘দ্বিতীয় দরিয়ানগর কবিতামেলা ১৪১৭’। দ্বিতীয় কবিতামেলায় আইসল্যান্ড, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তানসহ প্রায় আড়াইশ কবির অংশগ্রহণে কবিতামেলা কিছুটা আন্তর্জাতিক মেজাজ পায়। দ্বিতীয় কবিতামেলায় মেলার কবি সম্মাননা পান কবি বেলাল চৌধুরী।

অন্যান্যের মধ্যে কবিতাবাংলা আন্তর্জাতিক সম্মাননা পান যথাক্রমে কবি কামাল চৌধুরী, কবি মৃণাল বসুচৌধুরী ও আইসল্যান্ডের কবি গার্দুর ক্রিস্টনি; বর্ষসেরা নবকাব্য পদক পান কবি কামরুল হাসান তার ‘নাফকাব্য’র জন্য; সাহিত্যপত্র সম্মাননা পায় ‘খেয়া’ ও ‘মহাদিগন্ত’; সাহিত্য সংগঠনের মধ্যে কবিতাবাংলা পদক পায় ব্রহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমী, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী ও কবিতাবাংলা-মৌলভিবাজার শাখা। ষাটবছরপূর্তি সম্মাননা পান কবি শ্যামলকান্তি দাশ ও কবি অমিত চৌধুরী। কবিতাবাংলা আয়োজিত কবিতাবাংলা কক্সবাজার-এর ব্যবস্থাপনায় সে অনুষ্ঠানটিও ছিলো উল্লেখযোগ্য। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন অধিবেশনে উদ্বোধক, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কবি হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, শিক্ষাসচিব কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, পুলিশসুপার নিবাসকুমার মাঝিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ২০১১-এর ২১ শে অক্টোবর কবিতাবাংলা ময়মনসিংহে আয়োজন করে দিনব্যাপী ‘ময়মনসিংহ কবিতামেলা ১৪১৮’। কবিতাবাংলা ময়মনসিংহের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ময়মনসিংহ কবিতামেলায় ভারত এবং বাংলাদেশের দুইশতাধিক কবি অংশ গ্রহণ করেন। ময়মনসিংহ মেলায় কবিতার জন্য সম্মাননা দেয়া হয় যথাক্রমে কবি আসাদ চৌধুরী, কবি অমৃত মাইতি, কবি আবু হাসান শাহরিয়ার, কবি আশরাফ মীর, কবি মাহমুদ কামাল, কবি ফরিদ কবির ও কবি শামীম রেজাকে। আবৃত্তিচর্চায় অবদানের জন্য সম্মাননা দেয়া হয় বাচিকশিল্পী তারিক সালাহউদ্দিন মাহমুদকে। ময়মনসিংহ কবিতামেলা উপলক্ষেও আয়োজিত হয় কবিতাশপথ, শোভাযাত্রা, আলোচনা, সেমিনার ও স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। প্রতিটি অনুষ্ঠান উপলক্ষেই স্মরণিকা প্রকাশের পাশাপাশি প্রকাশিত হয় ‘কবিতাবাংলা’ পত্রিকাটি।

গত ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১২ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কবিতাবাংলার চারদিনের বিশেষ আয়োজন। এবারের আয়োজনের বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি অন্যরকম। ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বিডিনিউজ ২৪.কম সেমিনারকক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়। চারদিনব্যাপী কবিতার শান্তিযাত্রা, তৃতীয় আন্তর্জাতিক দরিয়ানগর কবিতামেলা ১৪১৯ ও আন্তর্জাতিক লেখক দিবস ২০১২ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কবিতাবাংলা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক কবি ফরিদ আহমদ দুলাল। জানানো হয়, কবিতার সৌন্দর্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে এই উৎসবকে ঘিরে ঢাকায় জড়ো হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবিরা। কবিতাবাংলার এ আয়োজনের সহ-উদ্যোক্তা হিসাবে ছিলো এডিএন টেলিকম, মনসুন লেটার্স ও বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরডটকম। মিডিয়া পার্টনার ছিলো দৈনিক সমকাল ও দৈনিক আমাদের সময়। সংবাদ সম্মেলন শেষে স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ গ্রহণ করেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবিবৃন্দ। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি হায়াৎ সাইফ, কবি বেবী মওদুদ, কবি উত্তম দাশ, কবি রাজু আলাউদ্দিন প্রমুখ; ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিডিনিউজ২৪.কম-এর প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক ইমরোজ খালেদি। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দেশসমুহের কবিদের সদ্যপ্রকাশিত প্রায় বিশটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মেচন করা হয়। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য হলো কবি উত্তম দাশ সম্পাদিত ‘বিশ্ববাংলা কবিতা’ শীর্ষক বাংলা কবিতার এক সুবিশাল সংকলন।

২৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন ও শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কবিতার শান্তিযাত্রা। শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কবিবৃন্দ ছাড়াও অংশ গ্রহণ করেন ভারতের উত্তম দাশ, মৃণাল বসুচৌধুরী, চন্দ্রিমা দত্ত, আয়েশা খাতুন; শ্রীলঙ্কার দয়াদিশানায়ক, ইন্দ্রাণী চন্দ্রলতা পাথিরানা; নেপালের প্রকাশ সুবেদি, কেশব সিগদেল, জীবেশ রায়ামাঝি; থাইল্যান্ডের চুটিমা সেভিকুল, প্রভাসন সেভিকুল; মেক্সিকোর মারিসোল রোহাস গানজালেসসহ অনেকেই। শহীদ মিনার থেকেই শুরু হয় কবিতার শান্তিযাত্রা। কবিরা শান্তিযাত্রা করে শহীদ মিনার থেকে সোপার্জিত স্বাধীনতা ও কবি নজরুলের সমাধি হয়ে শিখা চিরন্তনীতে গিয়ে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করেন। বেলা সাড়ে বারোটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সেমিনার কক্ষে আয়েজিত হয় আলোচনা অনুষ্ঠান ও কবিতা পাঠের আসর। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কবি হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড ও মেক্সিকোর কবিবৃন্দ স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ গ্রহণ করেন।

২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় কবিতার শান্তিযাত্রা ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়। পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় আয়োজন করা হয় কবিতাবন্ধন ও শান্তিশপথ। প্রচ- শীতের মধ্যেও কবিরা এসব কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন; শীতের রাতেও বেশকিছু দর্শক-শ্রোতা কবিদের শান্তিযাত্রার সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য দাঁড়িয়ে যান। বাংলাদেশের মানুষ যে সম্প্রীতির সপক্ষে ঐক্যবদ্ধ, শীতের রাতের এইসব স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণই সে কথা বলে দেয়। কবিদের শান্তিযাত্রা শেষ রাতে কক্সবাজার-দরিয়ানগরে পৌঁছে। ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের কবিদের সাথে যুক্ত হন শান্তিযাত্রার কবিগণ। শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পনের মাধ্যমে শুরু হয় দরিয়ানগর কবিতামেলা ১৪১৯-এর দুইদিনব্যাপী কর্মসূচির। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শান্তিশপথ পাঠ করান কবিতাবাংলার সভাপতি কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দরিয়ানগর কবিতামেলা ১৪১৯-এর প্রধান সমন্বয়ক কবি কামরুল হাসান। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র, কবি অসীম সাহা, কবি মাকিদ হায়দার, কবি ফরিদ আহমদ দুলাল, কবি আসলাম সানীসহ দেশ-বিদেশের কবিবৃন্দ অংশ নেন। শপথ গ্রহণের পর অনুষ্ঠিত হয় কবিতার শান্তিযাত্রা। শান্তিযাত্রা শহীদ মিনার থেকে কবিতাচত্বরে পৌঁছালে শুরু হয় কবিতামেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন কবি কামরুল হাসান, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র রাজবিহারী দাশ, জাতীয় কবিতা পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার আসলাম সানী, কবিতাবাংলা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবি ফরিদ আহমদ দুলাল এবং বিভিন্ন দেশের কবি প্রতিনিধিরা। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে অনুষ্ঠিত হয় অতিথি কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিকেল ৪টায় কবি মাকিদ হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় কবিতা পাঠের আসর। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় আলোকশিখা প্রজ্বালন ও ফানুস উড্ডয়নের পর পরিবেশিত হয় ঢাকা থিয়েটারের নাটক ‘বিনোদিনী’। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিচালনায় শিমুল ইউসুফ-এর একক অভিনয়ে সমৃদ্ধ নাটকটি দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে।

৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানের শেষ দিনের কর্মসূচি শুরু হয় ‘পালস’ নির্মিত সোনাদিয়া শীর্ষক ‘কবিতা মিলনায়তন’ উদ্বোধনের মাধ্যমে। কবিতা মিলনায়তন উদ্বোধন শেষে আবার কবিতার শান্তিযাত্রা। এবার গন্তব্য রামুর সিংহশয্যা বৌদ্ধ আসন মন্দির। বেলা ১১টায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও বর্বরতায় বিধ্বস্ত বৌদ্ধমন্দিরের পাশে আয়োজিত হয় শান্তির সপক্ষে কবিতা পাঠের আসর ও আলোচনা অনুষ্ঠান। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খান। আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন রামু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ, কবি কামরুল হাসান, কবিতাবাংলার সাধারণ সম্পাদক কবি ফরিদ আহমদ দুলাল, কবি উত্তম দাশ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার-চট্টগ্রামসহ অনেকেই। কবিতাবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয় এবারের এ শান্তিযাত্রা কেবল চারদিনের জন্য নয়, বরং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন আমাদের দেশে অথবা বিশ্বের দেশে দেশে ধর্মান্ধতা-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চলবে ততদিন শুভচেতনাসম্পন্ন কবিরা তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে–ততদিন পৃথিবীতে শান্তির সপক্ষে কবিতার শান্তিযাত্রা অব্যাহত থাকবে। কবিতাবাংলার এ আয়োজনে অতিথিবৃন্দসহ দেশবিদেশের কবিরা এর প্রশংসা করে বলেন, ‘কবিতাবাংলার শান্তিযাত্রা কাব্যান্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় কর্মসূচি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে কবিতাবাংলা কেবল কবিদের অন্তরে নয়, বরং সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।’ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সিংহশয্যা আসন মন্দিরের অধ্যক্ষ বিপন্ন সময়ে কবিদের সৌহার্দ-আয়োজনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং দুর্বিনীত সময়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং সচেতন মানুষ যেভাবে তাদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছেন তা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং কবিতাবাংলার সভাপতি কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, “আমরা ‘মানবিক সৌন্দর্যের জন্য কবিতা’ শ্লোগান নিয়ে কবিতাবাংলার যে যাত্রা শুরু করেছিলাম ২০০৮ সালে, তা-ই আজ সময়ের প্রয়োজনে কবিতার শান্তিযাত্রায় রূপান্তরিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়ন কেবল বাংলাদেশে নয় বিশ্বব্যাপী আজ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে; কেবল কবি-সাহিত্যিক নয় সর্বস্তরের সচেতন মানুষকে এর প্রতিরোধে আজ সোচ্চার হতে হবে।” অনুষ্ঠানে দেশের এবং বিশ্বের সর্বত্র যেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাস সে এলাকাকে ‘সম্প্রীতিএলাকা’ ঘোষণার দাবী জানানো হয়।

বিকেল সাড়ে তিনটায় সমুদ্রতীরে কবিতাচত্বরের হুদামঞ্চে প্রফেসর মুশতাক আহমদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ১১শ আন্তর্জাতিক লেখক দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও স্বরচিত কবিতাপাঠের আসর। অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও বহিরাগত কবিরা কবিতা পাঠ করেন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খান। কবি ফরিদ আহমদ দুলালের সঞ্চালনায় পুরস্কার ও শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেয়া হয়। এ বছর মেলার কবি হিসেবে সম্মাননা পদক পান পশ্চিমবঙ্গের কবি মৃণাল বসুচৌধুরী; কবিতার জন্য কবিতাবাংলা পদক পান কবি মাকিদ হায়দার ও কবি নাসির আহমেদ; পয়েট অব ইন্টারন্যাশনাল মেরিটে ভূষিত হন কবি উত্তম দাশ, অনুবাদকর্মের জন্য কবিতাবাংলা পুরস্কার পান প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ও কবি মুস্তাক আহমদ, ষাটবছরপূর্তি সম্মাননা পান কবি বিমল গুহ, কবিতাবাংলা সম্মাননা পান নেপালের প্রকাশ সুবেদি, শ্রীলঙ্কার দয়া দিশানায়ক, থাইল্যান্ডের চুটিমা সেভিকুল এবং মেক্সিকোর মারিসোল রোহাস গনজালেস। চারদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের পঁয়ত্রিশজন কবিসহ বাংলাদেশের দুই শতাধিক কবি অংশ গ্রহণ করেন। আগামীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কবিতার শান্তিযাত্রা আয়োজনের আহবান জানিয়ে শেষ হয় শান্তি, সম্প্রীতি, সৃষ্টিশীলতা ্ও ভালোবাসার এই অনন্য আয়োজন।