প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ, বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য আর পৌরাণিক গল্পকাহিনীর মাঝে কেউ আবার বলছেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পাওয়ার কথা।
এমন বিস্তৃত ক্যানভাস আর ভাবনার সমন্বয়ে এক ঝাঁক তরুণ শিল্পীর আঁকা ৪১টি ছবি নিয়ে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হয়েছে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘আলোকিত তারুণ্য সৃজনে অনন্য’।
একবিংশতম ‘বার্জার ইয়ং পেইন্টারস আর্ট কম্পিটিশন’-এ পুরস্কারজয়ী ছয়টি ছবিও এর মধ্যে রয়েছে।
গত ১৬ নভেম্বর এ পুরস্কারে প্রথম স্থান পেয়েছিলেন অয়ন ভট্টাচার্য্যের ‘স্টোন লেডি’। কাঠের খোদাইয়ের ক্যানভাসে এক নারীর মুখাবয়বে কঠোর ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি, বোঝাতে চেয়েছেন কোমল-কঠোর নারীর মননে সংগ্রামের স্পৃহা।
মতুরাম চৌধুরীর ‘স্মৃতি অমলিন ঐতিহ্য’ আক্রান্ত করে নস্টালজিয়ায়। অ্যাক্রেলিকে ডাক ব্যবস্থার গল্প নিয়ে আঁকা এ ছবি বার্জারের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পায়।
“কদিন আগেও ডাকপিয়ন এসে দাঁড়াত ঘরের দুয়ারে। অপেক্ষায় থাকতাম কখন আসবে প্রিয়জনের চিঠি। মোবাইল ফোন আর প্রযুক্তি এসে সেই আবেগ, আর অপেক্ষার গল্পগুলোকে কেড়ে নিল কোথায়,” নিজেকেই যেন জিজ্ঞাসা তাজরির।
প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছিলেন আবেদা সুলতানা। তার বিষয়- মানব হৃদয়। তিনটি বোতলকে পাশাপাশি সাজিয়ে ক্যানভাসে মানবপ্রকৃতির ভালো-মন্দ ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি ফুল আর কাগজ-পলিথিনের মোটিফে।
‘একজিস্টেন্স’ শিরোনামে আঁকা এ ছবির শিল্পী বলেন, “প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র এক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়, এরপর বেঁচে থাকার কঠিন লড়াইয়ে একপর্যায়ে সে ভুলেই যায় অস্তিত্বের কথা। সেই গল্প নিয়ে আমার এই ছবি।”
প্রায় একই পথে হেঁটেছেন রফিকুল ইসলাম। তার ‘যন্ত্রমায়া’য় ফুটে উঠেছে যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলে নিজেকে ভুলতে বসা নাগরিকদের কথা।
সিরিজ ছবি দিয়ে পঞ্চম হয়েছিলেন তন্বী দাসগুপ্ত। ক্রমাগত ধেয়ে আসা দেয়াল, যে দেয়াল ক্রমেই গ্রাস করে নিচ্ছে নিজেকে- এমন এক ছবির গল্প ‘বাস্তব ও অবাস্তবের ঘর’। সময়ের ভারে ক্রমাগত হারতে বসা মানুষের কাছে যখন সব বাস্তবতাই রূঢ়, মিথ্যা; তখনকার যন্ত্রণাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে তন্বীর ছবিতে।
রাশিদা আক্তার খোঁজেন প্রকৃতির ছন্দোবদ্ধ রূপ, যার সঙ্গে অদ্ভূত মিল আছে নারীর দেহাবয়বের। নানা রঙের ব্যবহারে নারীর ভিন্নরকম কাঠামো এঁকে ‘ফ্রম দ্য লাইট অফ নেচার’ সিরিজের নবম ছবিটির জন্য ষষ্ঠ পুরস্কার পান এ শিল্পী।
প্রদর্শনীতে আরও আছে আশরাফ সনেটের ‘কাঞ্চন’, ফারজানা রহমান ববির ‘এ লিফ অফ নেচার’, লামিয়া খানের ‘ল্যান্ডস্কেপ’, সৈকত হোসেনের ‘সিচুয়েশন’, থৈহলাকচিঙ মারমার ‘গ্লুমি’, মোসাব্বির আলমের ‘এক্সপ্রেশন’, ফারহানা ইয়াসমিনের ‘মাই উইন্ডো’, সুরায়া আক্তার রিমার ‘শিরোনামহীন’, দীপঙ্কর সিনহার ‘বার্থ অফ পিউরিটি’, পলাশ বরণ বিশ্বাসের ‘ডাম ফেইস’।
আছে জয়ন্ত সরকারের ‘ড্রামা’, দীপ্র বণিকের ‘খোয়াবনামা’, সুরভী আক্তারের ‘হোয়ার আর ইউ’, সুলতানা শারমিনের ‘ডেইলি লাইফ’।
তিনি বলেন, “আমরা প্রতিটি মানুষকে রাঙিয়ে দিতে চাই, সেজন্য তরুণদের ভাবনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
“এই তরুণরা জীবনের নানা বিচিত্র রঙকে তুলে আনছেন তাদের ক্যানভাসে। তাদের ছবিতে ফুটে উঠেছে অনেক বাধা উপেক্ষা করে মানুষের নিরন্তর সংগ্রামের গল্প।”
রূপালী জানান, দুই দশক ধরে তারা তরুণ চিত্রশিল্পীদের উৎসাহ দিতে চেষ্টা করছেন।
“যেন তারা উদ্ভাবনী দক্ষতাকে তুলে ধরতে পারে। ইচ্ছেমতো আঁকা ছবিতে শিল্পকে তুলে ধরতে পারে নানা ভঙ্গিতে। আমরা সেই স্বপ্নবাজদের অনুপ্রাণিত করতে চাই, সমর্থন জানাতে চাই স্বাধীনচেতা তরুণদের।”
আগামী শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা সবার জন্য খোলা থাকবে এ প্রদর্শনী।