কোথা থেকে এল অর্থের জাদু

‘অর্থই অনর্থের মূল’, ‘অভাব যখন দরজা দিয়ে ঢোকে ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়’-এই বাক্যগুলোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যত অর্থের যুগপৎ শুভ ও অশুভ ক্ষমতার ইঙ্গিত করা হয়। অর্থের এই জাদুকরী ক্ষমতার উৎস কোথায়? কীভাবে ঘটে বিষয়টি? সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টায় মগ্ন ছিল ‘ম্যাজিক অ্যান্ড লিটারেচার’ শিরোনামের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনটি।

চৌধুরী রুবাইয়াৎ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2016, 02:25 PM
Updated : 28 May 2016, 02:28 PM

ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস-ইউল্যাব আয়োজিত এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ‘মার্কস, মানি অ্যান্ড ম্যাজিক’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ দিনের আলোচনা।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনির্ভার্সিটির শিক্ষক ড. আজফার হোসেনের ‍উপস্থাপনায় সেমিনার হলটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

অর্থ ও তার ক্ষমতা নিয়ে বিশ্বের খ্যাতিমান সব দার্শনিক ও লেখক-কবির নানা বক্তব্য তুলে আনেন তিনি। ফাঁকে ফাঁকে জুড়ে দেন নিজস্ব মতামত। আবার প্রবন্ধের লিখিত রূপ থেকে চোখ সরিয়ে মেতে ওঠেন নানা ঘটনাপ্রবাহ ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে। কিন্তু তরী ঠিকই ভিড়িয়ে নেন অর্থ ও তার ক্ষমতার তীরে।

‘মানি ইজ দ্য সেকেন্ড গড’ অর্থাৎ ‘অর্থ দ্বিতীয় ইশ্বর’- বহুশ্রুত এই কথার অন্য অর্থে আজফার তুলে আনেন ইতালিয়ান দার্শনিক জিওর্জিও আগামবেনের উদ্ধৃতি ‘ইশ্বর মরেনি, তিনি অর্থে রূপান্তরিত হয়েছেন।’

কীভাবে অর্থের অভাবে সুকান্তের ভাষায় পৃথিবী গদ্যময় আর পূর্ণিমার চাঁদ ঝলসানো রুটি হয়ে ওঠে?

প্রখ্যাত রুশ লেখক আন্তন চেখভকে উদ্ধৃত করেন তিনি; ‘ভদকার মতোই অর্থও খ্যাপাটে অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে।’

প্রাবন্ধিকের পাঠের সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের চিন্তায় উন্মোচিত হতে থাকে শেক্সপিয়ার এবং কার্ল মার্কস; উভয়েই কাগজের এই টুকরোগুলো (অর্থ ধরে নিয়ে) কীভাবে আলোচনার জন্ম দেয়, আতঙ্ক সৃষ্টি করে, নির্দেশদাতার ভূমিকা গ্রহণ করে, নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে, ঐক্যবদ্ধ করে, বিভাজন ঘটায়, সৃষ্টি করে, ধ্বংস করে, উন্মোচন করে।

মার্কস প্রশ্ন তোলেন, অর্থের জাদুকরী ক্ষমতার উৎস কী? অর্থ কীভাবে অর্থ হয়ে উঠে? কোন জাদুকরী বস্তুকে প্রকৃতঅর্থে অর্থ বলা হয়? অর্থ তো একজনকে অপরজনের পশ্চাৎদেশেও চুম্বন করাতে পারে অবলীলায়।

এসবের নেপথ্যে ক্রিয়াশীল পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় অর্থই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। সেখানে সবকিছুকে রাজনীতি থেকে শুরু করে নারী শরীরকেও পণ্য করে তোলা হয়। অর্থ ভাষাকেও নিয়ন্ত্রণ করে, চালিত করে। এসবেরই বহুমুখী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ উঠে আসে আজফারের উপস্থাপনায়। তবে বলার ভঙ্গি আর ধরনে এটি শুধু কটকটে শব্দাবলী উঠে কিছু বাক্যের সমষ্টিমাত্র হয়ে থাকেনি, যেন হয়ে উঠেছিল ‘পারফরমেন্স’।

এরপর দুপুর ২টা থেকে ‘ম্যাজিক অ্যান্ড ডায়াসপোরা’ শিরোনামের সিরিজ আলোচনায় একে একে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুসারাত শামীম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সোনিয়া শারমীন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সাদিয়া জাফরিন।

‘ম্যাজিক অ্যান্ড ম্যাজিকেল এসেন্স/হিউম্যান রাইটস’ শিরোনামের সিরিজ আলোচনায় পেপার উপস্থাপন করেন কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে ফারহানা এবং তার সহকর্মী আবদুল্লাহ আল মুক্তাদির।

বিকাল পৌনে ৪টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ‘ম্যাজিক অ্যাক্রস দ্য কন্টিনেন্টাল ডিভাইডস: ক্যারিবিয়ান, লাতিন আমেরিকান অ্যান্ড মেক্সিকান লিটারেচার’ শিরোনামের প্যানেল আলোচনা।

এই আলোচনায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. জশুয়া য়ু বারনেট। বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সামসাদ মর্তুজা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসরুর শহীদ হোসেইন। 

এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যার মিডিয়া পার্টনার ছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।