বিশ্ব ব্যাংকের ‘বোধোদয়ে’ আশা দেখছেন মুহিত

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে কৌশল বদলের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ১০ অক্টোবর বার্ষিক বৈঠকে বসছে দুই ঋণদাতা সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2014, 04:17 PM
Updated : 7 Oct 2014, 06:39 PM

নানা জটিলতায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল হওয়ার পর নিজস্ব অর্থে কাজ শুরুর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেছেন, “আমরা আমাদের নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে দিয়েছি।… এখন যদি তারা আমাদের এই প্রকল্পে আবার যুক্ত হতে চায় তাহলে আমরা যেখানে আছি- অর্থ্যাৎ কাজ যতটুকু এগিয়েছে, যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই যুক্ত হতে হবে।”

সম্মেলন শুরুর আগে এক বক্তৃতায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতি যাতে কেবল সৌভাগ্যবানদের উন্নতি না ঘটিয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।”

তিন দিনের এই সম্মেলনে আগামী এক বছরের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ-সহায়তার পরিমাণও ঠিক করবে আর্থিক খাতের মোড়ল এ দুই সংস্থা।

দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১২ সালের জুনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করে দিলেও অনেক দেন-দরবারের পর বিশ্ব ব্যাংক আবার ফিরে আসার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সময়ক্ষেপণ হচ্ছে উল্লেখ করে সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে এই দাতা সংস্থাকে ‘না’ করে দেয়।

এরপর সরকার নিজস্ব অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়, যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থায়নের কৌশল সম্প্রতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। 

সংস্থাটি বলছে, তাদের অর্থায়নের কোনো প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে এখন থেকে তারা কাজ বন্ধ না রেখেই তদন্ত চালাবে।

এই প্রেক্ষাপটে এবারের বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে মুহিত বলেন, “আমাদের এই মেয়াদেই সবার স্বপ্নের সেতুর কাজ শেষ করব।”

অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই সম্মেলন শুরুর সূচি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া মুহিত সেখানেই কোরবানির ঈদের ছুটি কাটিয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, “আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি- তাদের (বিশ্ব ব্যাংকের) উচিৎ ছিল আমাদের পদ্মা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। কিন্তু সেটা না করে তারা আমাদের দুটি বছর সময় নষ্ট করেছে।”

তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের ‘বোধোদয় হয়েছে’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক তাদের সর্বশেষ কান্ট্রি অ্যাসিসট্যান্স স্ট্র্যাটেজি প্রোগ্রেস রিপোর্টে দুর্নীতির অভিযোগে থাকা প্রকল্প বাতিল নয়, বরং প্রকল্পে যুক্ত থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নীতি নিয়েছে। এটা যদি তারা আগে বুঝত তাহলে আমাদের পদ্মা সেতুর কাজ এতোদিনে অনেকটা এগিয়ে যেত।”

মুহিতের ভাষায়, বিশ্ব ব্যাংকের নতুন এই ‘উপলব্ধি’ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মঙ্গলজনক।

“এই উপলব্ধি যদি তাদের থাকে তাহলে যে কোনো প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার আগে তারা আরো সতর্ক হবে।”

আগের মতো এখনও মুহিত বলছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘কোনো দুর্নীতি হয়নি’। বিশ্ব ব্যাংক যেসব অভিযোগ করেছে তা অন্যান্য প্রকল্পেও হয়ে থাকে।

“বিশ্ব ব্যাংকের কারণে আমাদের দুই বছর লস হয়েছে। যে প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালে শুরু করতে পারতাম তা ২০১৪ সালে শুরু করেছি। তবে তাদের চলে যাওয়ায় আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়নি।”

ওয়াশিংটনে ১০ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বৈঠক শুরুর আগে সেখানে কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও অংশ নেবেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনিই বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলনে ১৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দীনও এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।