কপিরাইট লঙ্ঘন: ‘এবার আইনি লড়াই’

এক দশক ধরে সংবাদসেবায় অনেক নতুনের জন্ম দেওয়ার আনন্দের মাঝেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কর্মীদের শ্রমের ফসল শত শত কনটেন্ট নিয়মিত চুরি যাওয়ার হতাশার কথা উঠে এসেছে দেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্রের দশ বছর পূর্তি উদযাপনের অনুষ্ঠানে।   

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 07:36 PM
Updated : 23 Oct 2016, 07:36 PM

প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী জানান, নিয়মিত কনটেন্ট চুরির শিকার হওয়ার এক পর্যায়ে তারা ঠিক করেন- যথেষ্ট হয়েছে, এবার আইনি লড়াই।

“কপিরাইট লঙ্ঘন আর সহ‌্য করা হবে না।”

র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা; ছিলেন রাজনীতিবিদ, ব‌্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব‌্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা।

২০০৬ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ইন্টারনেটে পাঠকের জন‌্য উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে গত দশ বছরে একক পাঠক সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংবাদ মাধ্যমে পরিণত হওয়ার গল্প অতিথিদের সামনে উপস্থাপন করেন প্রধান সম্পাদক। 

সময়ের উদ্ভাবনী মেজাজকে ধারণ করে নতুন নতুন সব সংবাদ সেবা প্রবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “এর মাঝেও কিছু বিষয় হয়ে আছে বেদনার কারণ। দুর্ভাগ‌্য, আমাদের দেশ এমনই এক জায়গা, যেখানে কপি করা অপরাধ নয়।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, কুম্ভিলকবৃত্তি বা লেখা মেরে দেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশে শাস্তি হওয়ার নজির বিরল। কুম্ভিলকবৃত্তির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও কারও কারও দেশের সেরা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার খবর শোনা যায়।

“কপিরাইট শব্দটি অনেক মানুষের কাছেই কোনো অর্থ তৈরি করে না। আর এর লঙ্ঘনকে কোনো বিষয় বলেই গণ‌্য করা হয় না!”

কনটেন্ট চুরি নিয়ে একবার এক নামি পত্রিকার সম্পাদকের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা অনুষ্ঠানে শোনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক।

“আমি তাকে বলেছিলাম, আমার সহকর্মীরা অনেক পরিশ্রম করে যেসব প্রতিবেদন তৈরি করছে, তার পত্রিকায় স্রেফ কপি পেস্ট করে সেগুলো চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘এ রকম কতগুলো হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘আমার লোকজন যে তথ‌্য দিচ্ছে, তাতে প্রতিদিন দশটার মধ‌্যে অন্তত নয়টাই।’ উনি বললেন, ‘ না, না, অতগুলো বলে আমার মনে হয় না... হয়তো অল্প কিছু’।

“এভাবে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তিনি হয়ত এটা তার মৌলিক অধিকার বলেই ভেবেছিলেন।”

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া এরকম কিছু ‘কপি করা’ প্রতিবেদনের ক্লিপ দেখানো হয় অনুষ্ঠানে।

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, বিদেশি একটি সংবাদ সংস্থার কাছ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কেনা কনটেন্ট অনুমতি ছাড়া ছাপিয়ে দেওয়ায় আরেকজন সম্পাদককে যখন নোটিস পাঠানো হল, সেই সম্পাদক জবাবে বললেন, সেসব কনটেন্ট ‘ইন্টারনেটে এমনিতেই পাওয়া যায়!’ 

“মাঝে মাঝে আমার ক্ষোভ হয়, বেশিরভাগ ঘটনায় অসহায় বোধ করি। এতো বিপুল পরিমাণ কনটেন্ট চুরি যাওয়া মানে, আমাদের জন‌্য বিরাট অংকের ক্ষতি।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক আরও এক ধরনের চুরির কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। প্রতিষ্ঠানের নামের অংশবিশেষ নিয়ে, বা একই রকম শোনায় এমন নাম দিয়ে চলছে এই কাণ্ড। ইউকেবিডিনিউজ, মাইবিডিনিউজ২৪, রিয়েলবিডিনিউজ- এরকমই কিছু উদাহরণ।    

bdnews ও bdnews24 নামে দুটি টুইটার অ‌্যাকাউন্ট খুলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদকীয় নীতির উল্টো ‘যা খুশি তাই’ প্রকাশ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধান সম্পাদক বলেন, এর প্রভাবে তার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব টুইটার অ‌্যাকাউন্ট @bdnews24com অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

“এর মধ‌্যে একুটুই সান্ত্বনা যে আমরা যথেষ্ট ভালো করতে পারছি বলেই অন‌্যরা কপি করছে। এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে, যারা কেবল আমাদের অনুকরণ করে যাচ্ছে।”

এমনকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কনটেন্টের কপিরাইট চুরির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে প্রতিবেদনের নিচে নিয়মিত প্রকাশিত নোটিসও দেশের অন‌্যতম প্রধান এক ইংরেজি পত্রিকা হুবহু মেরে দিয়েছে বলে জানান তিনি।